সার্ক অঞ্চলে বিদ্যুৎ বিনিময়ের উদ্যোগ এগোচ্ছে

সার্ক দেশগুলোর জ্বালানির উৎস বৈচিত্রপূর্ণ, কয়লা-গ্যাস-জল শক্তি রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশে। এই অঞ্চলে জ্বালানির সমস্যা সমাধানে এসব শক্তিকে একীভূত করার উদ্যোগ এগিয়ে নিচ্ছে দেশগুলো। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১৫ সেপ্টেম্বর (২০১১) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সার্কভুক্ত দেশগুলোর জ্বালানি মন্ত্রীদের চতুর্থ বৈঠক। বিদ্যুৎ বিনিময়ের লক্ষ্যে একটি চুক্তির খসড়া নিয়ে আলোচনা করা হয় বৈঠকটিতে।

সার্ক দেশগুলোর ৪৫ জন প্রতিনিধির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত বৈঠকটি উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো আঞ্চলিক জোটটির আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে।  

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হয়েছে ‘সার্ক ইন্ট্রা গভর্নমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন এনাজি কো-অপারেশন ইন ইলেকট্রিসিটি’ শীর্ষক আঞ্চলিক চুক্তির যে খসড়াটি গ্রহণ করা বিষয়ে। তার আগে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সব দেশ খসড়াটির ব্যাপারে মতামত দেবে।
পাশাপাশি, মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকে ‘রিজিওনাল এনার্জি ট্রেড স্টাডি’ গ্রহণ করা হয়েছে। এই সমীক্ষাটি (স্টাডি) করেছে এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক)। এই সমীক্ষায় বলা হয়, সার্ক অঞ্চলে বছরে ৫ শতাংশ করে জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে। গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে ৬.৩৪ শতাংশ হারে। ২০২০ সালে সার্কে বিদ্যুতের চাহিদা হবে প্রতি ঘণ্টায় ২৯ লাখ ২০ হাজার ৬৯৩ কিলোওয়াট। বাণিজ্যিকভাবে জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে মালদ্বীপ এগিয়ে, দ্বিতীয় অবস্থানে আছে ভারত, তারপর যথাক্রমেÑ পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও আফগানিস্তান।

সার্ক দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তান একাধিক জ্বালানি উৎস ব্যবহার করে। অন্যদেশগুলো প্রায় সবাই একক উৎসের জ্বালানি নির্ভর। বাংলাদেশ শতকরা ২০ ভাগ তেল, দু ভাগ বিদ্যুৎ ও বাকিটা গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। পাকিস্তানে ৫ ভাগ কয়লা, ১০ ভাগ বিদ্যুৎ ও বাকিটা তেল ও গ্যাস থেকে ব্যবহার হয়। ভারতের জ্বালানির অর্ধেকই আসে কয়লা থেকে, এর বাইরে ৩ ভাগ জলবিদ্যুৎ ও বাকিটা তেল। ভুটানে জ্বালানি ব্যবহারের ৮০ ভাগ জলবিদ্যুৎ ও ২০ ভাগ গ্যাস উৎস থেকে আসে। আফগানিস্তানে প্রায় ১৮ ভাগ কয়লা, ২ ভাগ গ্যাস ও বাকি ৮০ ভাগ তেল থেকে। মালদ্বীপের জ্বালানির পুরোটাই তেল থেকে আসে।

সমীক্ষা অনুযায়ী বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতে গ্যাসের চাহিদা বাড়ছে। নেপাল ও বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে ভুটানে ২ ও মালদ্বীপে ৭ শতাংশ জ্বালানি তেল ব্যবহৃত হচ্ছে।

বৈঠকের পরে নেপাল, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করে বাংলাদেশ। এতে ভুটান জলবিদ্যুৎ বিনিময়ে আগ্রহী হলেও নেপাল তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেনি।

জ্বালানি মন্ত্রীদের এ বৈঠকে উদ্বোধনী বক্তৃতায় সার্ক অঞ্চলে জ্বালানি সহায়তা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করা সম্ভব হলে দক্ষিণ এশিয়া একটি একীভূত অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হবে।’ সার্কের মাধ্যমে আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সমন্বয় ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার ওপর জোর দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও জ্বালানি ক্ষেত্রে রয়েছে অভিন্ন চ্যালেঞ্জ। এজন্যই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সার্ক এজেন্ডায় জ্বালানি খাতকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় জানান যে, বর্তমান সরকার বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে সার্ক আন্তঃদেশীয় গ্রিড সংযোগ স্থাপনের কাজ শুরু করছে। এই গ্রিড সংযোগ স্থাপিত হলে অন্যান্য সার্ক সদস্য দেশেও গ্রিড সংযোগ স্থাপন সহজ হবে। মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালের জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সামর্থ্যকে পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলে এই অঞ্চল ‘পরিবেশবান্ধব শক্তি’ উৎপাদনে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। এর ফলে এ অঞ্চলের পরিবেশ বিপর্যয় রোধ করাও সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, সার্কের বর্তমান সদস্য রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা।

রাজনৈতিক ডটকম, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *