মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আদ্যোপান্ত

ভূমিকা: আগামী ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিধর রাষ্ট্র, যেহেতু দেশটির প্রেসিডেন্টের হাতে রয়েছে ব্যাপক ক্ষমতা — ব্যাপক ক্ষমতা বলতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট একইসঙ্গে দেশটির সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং সামরিক বাহিনীর কমান্ডার-ইন-চিফ, কংগ্রেসের যে কোনো আইনকে অনুমোদন ও বাতিল করা, মন্ত্রিসভা গঠন ও উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে তার রয়েছে একচ্ছত্র ক্ষমতা, তাছাড়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি চাইলে বিশ্বব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে পারেন — তাই স্বভাবতই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন সেদিকে আমাদের সবার নজর রয়েছে। সঙ্গত কারণেই দেশটির নির্বাচন পদ্ধতি সম্পর্কেও আমরা জানতে চাই। কিন্তু যেহেতু বিগত দু শ’ শতাব্দী ধরে দেশটি পরিপূর্ণভাবে গণতন্ত্র চর্চা করে তাই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পদ্ধতি কিছুটা জটিল এবং কিছুটা পরোক্ষ।

প্রতি চার বছর পর পর অনুুষ্ঠিত হয় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনের রয়েছে অনেকগুলো ধাপ। প্রথমে প্রার্থীদেরকে ব্যক্তিগত ইমেজ ও দূরদর্শিতা প্রদর্শন করে দলের সমর্থকদের মন জয় করে দলীয় মনোনয়ন পেতে হয়। সবার শেষে দলের জাতীয় সম্মেলনে চূড়ান্তভাবে দলীয় প্রার্থী মনোনীত হয়। এরপর নির্বাচনের দু তিন সপ্তাহ আগে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রার্থীর মধ্যে তিনটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। মূল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় নভেম্বরের ২ থেকে ৮ তারিখের মাঝের মঙ্গলবার। সে হিসেবে ০৮ নভেম্বর ২০১৬ অনুষ্ঠিত হবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ এবং উচ্চকক্ষ সিনেটের এক-তৃতীয়াংশ এবং ইলেক্টরাল কলেজের সদস্যরা নির্বাচিত হয় এ দিন। নির্বাচনের পর ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের ভোটে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সবশেষে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব গ্রহণ করেন পরের বছরের ২০ জানুয়ারি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রক্রিয়া/ধাপসমূহ:
নিম্নে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এই প্রক্রিয়া/ধাপগুলো উল্লেখ করা হলো:
১. প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা:
যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে প্রার্থীকে অবশ্যই তিনটি শর্ত পূরণ করতে হয়। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হতে হবে। দ্বিতীয়ত, ৩৫ বছর বয়সী এবং তৃতীয়ত, অন্তত ১৪ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বাস করতে হবে। তৃতীয়ত, কেউ দুই মেয়াদের বেশি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না, এটাও প্রার্থিতার শর্তের অন্তর্ভুক্ত।

২. প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারি ও ককাস দলীয় মনোনয়ন: বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে দলীয় গণতন্ত্র নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে দলীয় গণতন্ত্রের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃষ্ট উদাহরণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম ধাপে বড় দুটি দলের মনোনয়ন প্রক্রিয়াকে প্রাইমারি ও ককাস বলে। এর মাধ্যমে দলীয় প্রতিনিধি বা ডেলিগেট নির্বাচিত হয়। যারা জাতীয় কনভেনশনে গিয়ে দলীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন। এর আয়োজন করে থাকে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। ৫০টি রাজ্যেই আগে পরে প্রাইমারি ও ককাস অনুষ্ঠিত হয়। ডেমোক্র্যোট ও রিপাবলিকানদের প্রতিনিধি নির্বাচন অধিকাংশ রাজ্যে একই দিন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নির্বাচনের প্রক্রিয়া দু দলের ভিন্ন ভিন্ন হয়। কোনো রাজ্যে সাধারণ জনগণ সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কোনো একটি দলের মাত্র একজন মাত্র প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন। প্রাইমারি নির্বাচন অনেকটা সাধারণ নির্বাচনের মতো। ককাসের ক্ষেত্রে দলীয় সদস্যরা নির্ধারিত দিনে একটি নির্ধারিত জায়গায় মিলিত হয়ে গ্র“পে বিভক্ত হয়ে পড়ে, এ বিভক্তিকে ককাস বলে। সমর্থনের আধিক্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়।

প্রাইমারির মাধ্যমে সারাদেশ থেকে দলীয় প্রতিনিধি বা ডেলিগেট নির্বাচিত হয়। অবশ্য বছর বছর দুুটি দলেই দলীয় প্রতিনিধি পরিবর্তন হয়। এবার রিপাবলিকান দলের দলীয় প্রতিনিধি সংখ্যা ২,৪৭২। এর মধ্যে একজন প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে হলে কমপক্ষে ১,২৩৭টি দলীয় প্রতিনিধি ভোট পেতে হবে। অন্যদিকে ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেতে হলে ৪,৭৬৩ দলীয় প্রতিনিধি ভোটের মধ্যে ২,৩৮৩টি ভোট পেতে হবে। ইতোমধ্যে আপনার জানেন যে, ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে হিলারি ক্লিনটন এবং রিপাবলিকান পার্টি থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মনোনয়ন পেয়েছেন।

৩. সুপার টিউসডে: সুপার টিউসডে এমন একটি দিন, যেদিন সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অঙ্গরাজ্যে একসাথে প্রাইমারি ও ককাস অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালে প্রথম এটি শুরু হয়। ২০০০ সালের ৭ মার্চ একসাথে ১৬টি রাজ্যে প্রাইমারি নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালে সুপার টিউসডে দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এবার ১২টি অঙ্গরাজ্যে প্রাইমারি ও ককাস অনুষ্ঠিত হয় ১ মার্চ ২০১৬।

৪. দলীয় সম্মেলন: প্রাথমিক পদক্ষেপ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রধান বড় দুটি দল ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রার্থীরা প্রার্থী মনোনয়নে সম্মেলনের আয়োজন করে। ১৮ জুলাই ওহাইও’তে রিপাবলিকান ও তার এক সপ্তাহ পর ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্রেট সমর্থকদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চার দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদের প্রশংসাসূচক বাক্যালাপে প্রার্থীকে বরণ করা হয়। এবার ২৫ জুলাই ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে দলীয় প্রতিনিধিরা আনুষ্ঠানিকভাবে হিলারি ক্লিনটনকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেন।

৫. তিন পর্বে প্রেসিডেন্ট বিতর্ক: নির্বাচনের কিছুকাল আগে তিন পর্বের প্রেসিডেন্ট বির্তক অনুষ্ঠিত হয়। এই বিতর্ক স্বাধীন কমিশন কর্তৃক পরিচালিত হয়। ১৯৭৬ সাল থেকে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান প্রার্থী সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে এ বিতর্কে অংগ্রহণ করেন। এই বিতর্ক কোনো প্রার্থীর পক্ষে জনমত তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। ইতোমধ্যে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং তিনটি বিতর্কেই ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন জয়ী হয়েছেন।

৬. ইলেক্টরাল কলেজ বা নির্বাচক সংস্থা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২নং ধারা অনুসারে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় ইলেক্টরাল কলেজের মাধ্যমে। ফিলাডেলফিয়া সম্মেলনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও উপ-প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ইলেক্টরাল কলেজ বা নির্বাচক সংস্থার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। সে পদ্ধতি অনুসারে নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট এবং তার পরবর্তী ভোটপ্রাপ্ত প্রার্থীকে উপ-প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ঘোষণা করা হতো। ১৮০০ সালের নির্বাচনে দুজন প্রার্থী সমানসংখ্যক ভোট লাভ করায় সংকট দেখা দেয়। ফলে ১৮০৪ সালের সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টর জন্য পৃথক নির্বাচক সংস্থার ব্যবস্থা করা হয়।

এখন প্রশ্ন হলো– এই ইলেক্ট্ররাল কলেজের সদস্য কারা? তার আগে বলে নেই যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সিনেটের ১০০ সদস্য এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়। এই যে প্রতিনিধি সভার ৪৩৫ জন, সিনেটর ১০০ জন এবং ওয়াশিংটন ডিসি থেকে আরও ৩ জনÑমোট ৫৩৮ জনের সমান ইলেক্টরাল কলেজের সদস্য নির্বাচন করা হয়। কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে জয়ী হতে হলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোট পেতে হবে। নির্বাচনের পূর্বে প্রত্যেক প্রার্থী নিজের অথবা তার দলের পছন্দ অনুযায়ী ইলেক্টর মনোনয়ন দেন। মেইন ও নেব্রাস্কা ছাড়া বাকি সব ক’টি অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশি পপুলার ভোট পান, সে রাজ্যে তার মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজের সবাই জিতলেন বলে বিবেচিত হন।

২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট না পেলে কী করা হয়:
কোনো প্রার্থী ইলেক্টরাল কলেজের প্রয়োজনীয় ২৭০ ভোট না পেলে প্রেসিডেন্ট নির্র্বাচনের দায়িত্ব চলে যায় কংগ্রসের হাতে। মার্কিন সংবিধানের ২২নং সংশোধনী অনুসারে, নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে। ইলেক্টরাল কলেজের ভোটে উপ-প্রেসিডেন্ট যদি নির্বাচিত না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে সিনেট সদস্যদের ভোটাভুটির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি পরিষদ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যর্থ হলে উপ-প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাবেন। যদি উপ-প্রেসিডেন্ট-ও নির্বাচিত করা না যায় সে ক্ষেত্রে প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হবেন।

ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করার কারণ:
পপুলার ভোটের ভিত্তিতে না হয়ে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতিতে কেন প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়? এর কারণ হলো:
আমরা জানি, জনসংখ্যার অনুপাতে প্রতি রাজ্যের জন্য ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্য নির্ধারণ করা হয়। নিউইয়র্ক ও ক্যালির্ফোনিয়ার মত রাজ্যে ভোটার সংখ্যা অনেক বেশি। এখন যদি প্রেসিডেন্ট শুধুমাত্র বড় ও জনবহুল কয়েকটি রাজ্য যেমন, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, নিউ ইউয়র্ক, ওহাইও, ফ্লোরিডা, ইলিনয়, প্যাসিলভানিয়া ইত্যাদি রাজ্যের দ্বারাই পপুলার ভোট পেয়েই নির্বাচিত হয়ে যান তাহলে তিনি পুরো দেশের জনগণের ম্যান্ডেট না নিয়েই ক্ষমতায় চলে যাবেন এবং দেশের নির্বাচনে ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ছোট ছোট বাকি রাজ্যগুলোর কোনো মূল্যই থাকবে না, যা মার্কিনীদের মতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিপরীত। তাই পুরো দেশের জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার জন্যই ইলেক্টোরাল কলেজের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয়। অর্থাৎ মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কিছুটা হলেও পরোক্ষ নির্বাচন।

ফলাফল ঘোষণা ও শপথ গ্রহণ:
নভেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হয় আরও দু মাস। ডিসেম্বরে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দেবেন ইলেক্টোরেটরা। পরের বছরের জানুয়ারির ৬ তারিখে কংগ্রেসের একটি যৌথ অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে ইলেক্টোরাল ভোট গণনা করা হয়। সিনেটের সভাপতির তদারকিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন।

সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নাও হতে পারেন
মূলত, নির্বাচনে একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে ভোট দিলেও মূলত ভোটাররা ইলেক্টর নির্বাচনের জন্যই ভোট দেন। আর ইলেক্টরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তাই দেখা যায়, পপুলার ভোট বা দেশের মোট ভোট বেশি পেয়েও কেউ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন না। যেমনটা আমরা দেখি ১৮২৪, ১৮৭৬, ১৮৮৮, ২০০০ সালের নির্বাচনে। ২০০০ সালের নির্বাচনে ইলেক্টোরাল ভোট কম পাওয়ায় ডেমোক্রেট প্রার্থী আল গোর জর্জ ডব্লিউ বুশের চেয়ে ১০ লাখ বেশি পপুলার ভোট পেয়েও নির্বাচিত হতে পারেননি। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হলে একজন প্রার্থীকে অবশ্যই ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেতে হবে। একটু আগে আমরা বলছিলাম, যে অঙ্গরাজ্যে যে দল অধিকাংশ ভোট পাবেন সে রাজ্যের সব ক’টি ইলেক্টোরাল প্রতিনিধি সে দলের হবে। মাত্র ৫১ শতাংশ ভোট পেয়েও তা হতে পারে আবার তা ৯০ শতাংশ ভোট পেয়ে হতে পারে। ক্যালিফোর্নিয়ার ইরেক্টোরাল প্রতিনিধির সংখ্যা ৫৫। জয়ী পার্টি পেল ৫১ শতাংশ ও বিজিত পার্টি পেল ৪৯ শতাংশ ভোট। এক্ষেত্রে ৫৫ জন প্রতিনিধি হবে বিজয়ী দলের। সুতরাং পপুলার ভোট কম পেয়েও ইলেক্টোরাল ভোট বেশি পেয়ে একজন প্রার্থী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হতে পারেন।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য:
প্রথমত.
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন গণতান্ত্রিক হলেও কিছুটা পরোক্ষ। কারণ পপুলার ভোট যে যতই পান না কেন, মোট ৫৩৮ ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে ন্যূনতম ২৭০টি না পেলে নির্বাচিত হওয়া যায় না। এই ৫৩৮-এর ধাঁধায় একজন প্রার্থী বেশি পপুলার ভোট পেয়েও নির্বাচনে হারতে পারেন।

দ্বিতীয়ত.
জাতীয় নির্বাচন হলেও কোনো একক জাতীয় নিয়মের ভিত্তিতে হয় না এই নির্বাচন। প্রতিটি অঙ্গরাজ্য তার নিজস্ব নিয়ম ও আইনের ভিত্তিতে ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। কোনো অঙ্গরাজ্যে যে প্রার্থী বেশির ভাগ পপুলার ভোট পান, সে রাজ্যে তার মনোনীত ইলেক্টোরাল কলেজের সবাই জিতলেন বলে বিবেচিত হন। কিন্তু মেইন এবং নেব্রাস্কার বেলায় এ সরল নিয়ম কাজ করে না। ওই দুই রাজ্যে যে প্রার্থী পপুলার ভোটে জয় লাভ করেন, তিনি পান রাজ্যের দুই সিনেটরের বিপরীতে দুটো ইলেক্টোরাল কলেজ, বাকিগুলো নির্ভর করে রাজ্যজুড়ে আনুপাতিক প্রাপ্ত ভোটের ওপর। অর্থাৎ যে প্রার্থী যে কয়টি কংগ্রেশনাল ডিস্ট্রিক্টে জেতেন, তিনি পান আরও ততটি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট।

তৃতীয়ত.
মার্কিন রাজনীতি ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকান দলকেই ঘিরেই আবর্তিত। রিপাবলিকানরা কনজারভেটিভ, তারা করপোরেট আমেরিকা এবং সুপার ধনীদের স্বার্থই বেশি করে দেখেন, মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্সের দোসর, কারণে-অকারণে যুদ্ধ বাধাতে চান। ডেমোক্র্যাটিক পার্টি লিবারেল, তারা প্লুরেলিজমে বিশ্বাস করেন, অভিবাসী ও ছোট জাতিগোষ্ঠীর প্রতি সহানুভূতিশীল, গরিব ও মধ্যবিত্তদের স্বার্থের ব্যাপারেও অধিক যতœবান ও সংবেদনশীল। এর বিপরীতে দেখা যায়, রিপাবলিকান পার্টি কনজারভেটিভ মূল্যবোধ এবং জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে নির্বাচনে জিততে চান।

চতুর্থত.
যুক্তরাষ্ট্রে কিছু রাজ্য রেড স্টেট, মানে সেখানে রিপাবলিকানরাই সংখ্যগরিষ্ঠ। কিছু রাজ্য ব্লু স্টেট, মানে সেখানে ডেমোক্রেট পার্টির শক্ত অবস্থান। আর কিছু রাজ্য টসআপ/সুয়িং স্টেট, মানে উভয় দিকে যেতে পারে। দেখা যায়, ব্লু এবং রেড জোনে বলতে গেলে কোনো প্রচারণা চলে না। কারণ ঐ রাজ্যগুলো ঐতিহাসিকভাবে নিজ নিজ দলের বাঁধা ভোট। ঝুলন্ত কিংবা সুইং স্টেটগুলোতেই চলে দু দলের তুমুল প্রচারণা। এই সুইং স্টেটের মধ্যে বড় তিনটি স্টেট হলো– পেনসিলভানিয়া, ওহাইও এবং ফ্লোরিডা। বলা হয়ে থাকে, এ তিন রাজ্যের মধ্যে যে দুটো পান, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

নির্বাচন পূর্ব জরিপের ফলাফল:
ক্স সম্প্রতি হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত সার্ভারে ই-মেইল চালাচালি নিয়ে নতুন করে তদন্তের ঘোষণা দেয় এফবিআই। এতে হিলারির নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। খানিকটা বেকায়দায় পড়লেও তা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি। বিভিন্ন জরিপে এখনো হিলারিই এগিয়ে রয়েছেন। সর্বশেষ (০৫ নভেম্বর ২০১৬) সিএনএন ও ওআরসির যৌথ জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৯ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪৪ শতাংশ; আর সিএনএন-এর নিজস্ব জরিপে হিলারি ৪৭ শতাংশ ম্ভাব্য ভোটার সমর্থন দিয়েছেন।
ক্স নিউইয়র্ক টাইমস এর জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৫.৪ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪২.৮ শতাংশ; এবং এবিসি নিউজ ও ওয়াশিংটন পোস্টের জরিপে হিলারির পক্ষে ৪৭ শতাংশ ও ট্রাম্পের পক্ষে ৪৩ শতাংশ সমর্থন দেখানো হয়েছে।
ক্স জাতীয়ভাবে পরিচালিত কয়েকটি জরিপের ফল গড় করে জরিপ সংস্থা রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্স জানায়, সারাদেশে হিলারি ১.৭ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। হিলারির সমর্থন রয়েছে ৪৭ শতাংশ এবং ট্রাম্পের সমর্থন ৪৫.৩ শতাংশ।
ক্স এরই মধ্যে দেশটি ৩৮টি রাজ্যের তিন দুই কোটি ভোটার আগাম ভোট দিয়েছেন। সিএনএন এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ‘আগাম ভোটে’ও এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।
ক্স সিএনএন-এর বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হিলারি ২৭২টি এবং ট্রাম্প ১৭৯টি ইলেক্টোরাল কলেজের ভোট পেতে যাচ্ছেন। বাকি ৮৭টি রাজ্যে টপ-আপ হবে, মানে যে কেউ জিততে পারেন। জরিপ সংস্থা রিয়ালক্লিয়ারপলিটিক্স-এর মতে, ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের জরিপেও হিলারি এগিয়ে রয়েছেন। তাদের ধারণা, হিলারি ২২৬টি ইলেক্টোরাল ভোট পাবেন। অন্যদিকে ট্রাম্প মাত্র ১৮০টি ভোট পেতে পারেন। বাকি রাজ্যগুলোতে যে কেউ জিততে পারেন।

মার্কিন কংগ্রেস ও সিনেট:
এই বিষয়ে বিস্তারিতভাবে বলতে চাই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস দুই কক্ষ বিশিষ্ট। জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে সিনেটের ১০০ সদস্য এবং প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫ জন সদস্য নির্বাচিত হয়। নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ দুই বছর মেয়াদি। তারা একেকটি আসন/জেলার প্রতিনিধিত্ব করেন। উচ্চকক্ষ সিনেটের সদস্যরা ছয় বছরের জন্য নির্বাচিত হন। প্রতি দুই বছর অন্তর সিনেটের এক তৃতীয়াংশের নির্বাচন হয়। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যে দু’জন করে সিনেটর থাকেন। আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় কংগ্রেসের উচ্চ ও নিম্নকক্ষ সমান ভূমিকা পালন করে। প্রতিনিধি পরিষদ জনগণের নিকট দায়বদ্ধ থাকে। সিনেটরদের প্রভাব প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যদের চেয়ে অনেক বেশি থাকে এবং তারা তাদের রাজ্যের সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে থাকেন। আর এই সিনেটররাই পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট, উপ-প্রেসিডেন্ট ও রাজ্য গভর্নর হয়ে থাকেন।

দ্বি-দলীয় ব্যবস্থা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাস ডেমোক্র্যেট ও রিপাবলিকান দলকেই ঘিরে আবর্তিত। সেখানকার রাজনৈতিক ব্যবস্থা মূলত দ্বি-দলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা। এ দুটি দলই নির্বাচনে রাজনীতি এবং সরকারি ক্ষমতা অর্জনের প্রতিদ্বন্ধিতায় লিপ্ত হয়। দক্ষিণের ভোটারগণ ডেমোক্রেটিক দল এবং উত্তরের ভোটদাতাদের মধ্যে রিপাবলিকান দলের পক্ষে ভোট দানের প্রবণতা লক্ষ করা যায়। এ দুটি দল ছাড়াও সাম্প্রতিককালে নিউইয়র্কে লেবার পার্টি, লিবারেল পার্টি এবং কনজারভেটিভ দলের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া উনবিংশ শতাদ্বীর শেষ এবং বিশ শতাব্দীর শুরুতে পপুলিস্ট ও প্রগ্রেসিভ দলের প্রভাব ছিল।

অক্টোবর সারপ্রাইজ:
নির্বাচনের ঠিক আগে অক্টোবর মাসে কোনো প্রার্থীকে ধরাশায়ী করতে প্রতিপক্ষ কর্তৃক উত্থাপিত প্রচণ্ড সংবেদনশীল ইস্যু, প্রতিশ্র“তি বা অভিযোগ ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন, এফবিআই এর পরিচালক জেমস বি কমি মার্কিন নির্বাচনের দু সপ্তাহেরও কম সময় বাকি থাকতে এমন একটা সারপ্রাইজ দিলেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, হিলারি ক্লিনটনের আরও ইমেইল তদন্ত করছে তার সংস্থা এফবিআই, যা হিলারির সর্থমন কমিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তা হিলারির জয়ের ক্ষেত্রে কোনো বাধা হবে না অনেকে মনে করেন। একইরকমভাবে নির্বাচনের শেষ সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে নারী কেলেংকারীর অভিযোগ ওঠাও একটি ‘অক্টোবর সারপ্রাইজ’ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

প্রধান দুই প্রার্থীর পরিচিতি:
হিলারি ক্লিনটন: হিলারি ক্লিনটন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি ১৯৪৭ সালে শিকাগোর ইলিয়নসে জন্মগ্রহণ করেন। সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিলারি বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রথম মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হওয়া বিভিন্ন জনমত জরিপের বেশিরভাগেই তিনি এগিয়ে রয়েছেন। হিলারি জয়ী হলে তা হবে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রেসিডেন্ট হওয়ার ঘটনা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হিলারির স্বামী।

ডোনাল্ড ট্রাম্প: রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আবাসন ব্যবসায়ী ধনকুবের ট্রাম্পের রাজনীতিতে পূর্বের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস ও আপত্তিকর মন্তব্যের কারণে তিনি প্রায়ই সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন, দেশে-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। সর্বশেষ নারী নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন জনমত জরিপে তিনি কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও হিলারির ই-মেইল বিতর্কেও কারণে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অন্যান্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরিচয়:
গ্যারি জনসন: তিনি লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন। ১৯৯৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিউ ম্যাক্সিকোয় রিপাবলিকান গভর্নর ছিলেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়নের লড়াইয়েও ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সেখান থেকে সরে এসে লিবার্টারিয়ান পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন। এবিসি নিউজের এক জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে পাঁচ শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তিনি একজন সাবেক নির্মাণ ব্যবসায়ী।

জিল স্টেইন: প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন জিল স্টেইন। পরিবেশ বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুতে সোচ্চার স্টেইন। দুই-দলীয় যে ধারা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আসছে তিনি তার বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও স্টেইন গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। এবিসি নিউজের জরিপে দেখা গেছে, আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দু শতাংশ ভোটার তাকে সমর্থন দিচ্ছেন।

ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের পরিচয়:
টিম কেইন: ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের রানিংমেট (ভাইস প্রেসিডেন্ট) ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন। ৫৮ বছর বয়সী সিনেটর টিম কেইন গর্ভপাতবিরোধী এবং মুক্তবাণিজ্য চুক্তির একজন সমর্থক। অনর্গল স্প্যানিশ ভাষা বলায় পারদর্শী কেইন আসন্ন নির্বাচনে প্রচারণায় হিস্প্যানিক আমেরিকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে হিলারির সমর্থন ধরে রাখার ব্যাপারে সহায়তা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে হিস্প্যানিক জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট রয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি গর্ভপাতকে প্রত্যাখ্যান করলেও গর্ভপাতের অধিকারকে সমর্থন করেন।
মাইক পেন্স: রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের রানিংমেট (ভাইস-প্রেসিডেন্ট) ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর মাইক পেন্স। ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে পেন্স ১২ বছর ওয়াশিংটনে কংগ্রেস সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গর্ভপাতবিরোধী কঠোর অবস্থানে থাকা ইন্ডিয়ানার গভর্নর পেন্স ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইনেও সাক্ষরকারী। অনেকেই এই আইনটিকে সমকামিতা-বিরোধী আইন হিসেবেই দেখছেন।

হিলারি ও ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি:
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাঝে অনেক বিষয়ে স্পষ্ট ভিন্নতা রয়েছে। হিলারি বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্ব বিশ্বে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা ধরে রাখা। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প মিত্র নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক সম্পর্ককে বেশি গুরুত্ব দিতে চান। নিম্নে বিভিন্ন ইস্যুতে হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যকার মতের ভিন্নতা তুলে ধরা হলো:

সিরিয়া: ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরানোর চেয়ে আইএসকে ধ্বংস করাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের মতে, প্রেসিডেন্ট আসাদ আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন কিন্তু এ ব্যাপারে ট্রাম্পের সাথে একমত নন হিলারি। ট্রাম্পের মতে আসাদকে উৎখাত করা হলে সিরিয়া সংকট আরও বাড়তে পারে।

ন্যাটো: ট্রাম্প ন্যাটোকে সেকেলে বলেছেন এবং ন্যাটোর অনেক সদস্যকে অকৃতজ্ঞ বলেছেন। তার মতে, ন্যাটোর অনেক সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফায়দা লুটছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ ও এশিয়ায় তার মিত্রদের নিরাপত্তার জন্য এতো অধিকহারে ব্যয় করে যেতে পারবে না। মিত্রদেশগুলোকে নিজেদেরই নিরাপত্তা ব্যয় বহন করতে হবে। ন্যাটোর দেশগুলো জিডিপির দুই শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় না করায় তাদের তীব্র সমালোচনা করছেন ট্রাম্প। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ওবামার ন্যায় হিলারি ক্লিনটনও ন্যাটোর ওপর খুবই আস্থাশীল। হিলারি ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকে অন্যতম সেরা বিনিয়োগ বলেছেন।

রাশিয়া: হিলারি ক্লিনটন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়ার সময় যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। ন্যাটোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ইউরোপে জ্বালানি নিরাপত্তার ব্যাপারে তিনি প্রতিশ্র“তিবদ্ধ। অন্যদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গুজব রয়েছে রাশিয়ার সাথে তার যোগসাজশ রয়েছে। রাশিয়ার সাথে তার এক সময় ব্যবসা ছিল। তার কয়েকজন উপদেষ্টা আছেন যাদের রাশিয়ার সাথে গোপন যোগাযোগ রয়েছে।

ইসলামিক স্টেট (আইএস): হিলারি ও ট্রাম্প দুইজনই ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে বললেও ট্রাম্প ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের কথা বলছেন। তিনি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা না করায় ওবামা প্রশাসনের সমালোচনা করেছেন। তবে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে হিলারি ও ট্রাম্পের প্রস্তাবনায় যথেষ্ট মিলও রয়েছে। দুইজনই সম্মুখযুদ্ধে মধ্যপ্রাচ্যে সেনা নামাতে চান না। বরং আরব দেশগুলোকে সামরিক সহায়তা বাড়াতে বলেছেন। ট্রাম্প সিরিয়ায় আইএসের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাথে মিলে অভিযান চালানোর এবং যুদ্ধ বন্দিদের কাছ থেকে কথা বের করার জন্য আরো কঠোর হওয়ার কথা বলেছেন। হিলারি বন্দি নির্যাতনের বিরুদ্ধে।

ইরান: হিলারি ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তির পক্ষে। তবে তিনি কঠোরভাবে চোখ রাখতে চান ইরানের ওপর। পাশাপাশি ইরানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সরব করতে চান তিনি। অন্যদিকে এই চুক্তির তীব্র বিরোধী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ চুক্তিগুলোর মধ্যে একটি বলেছেন। তবে দুইজনই একমত ইরান পরমাণু অস্ত্র বানানোর চেষ্টা করলে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিপ্রয়োগ করবে।

ইসরাইল: হিলারির প্রচারণা শিবিরে না হলেও ডেমোক্রেটদের মাঝে ইসরাইলকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সংশয় দেখা গেছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের সাথে অটুট বন্ধনের ওপর জোর দিয়েছেন। তবে তিনি যেকোনো শান্তি চুক্তির ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র চান তবে ফিলিস্তিনিদের ঘৃণার পথ পরিহার করতে হবে।

চীন: চীনা পণ্যের ওপর ট্যাক্স বাড়াবেন বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের সাথে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতে চান হিলারি। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানায় চীনের অবৈধ প্রভাব কমাতে আরও ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন হিলারি। ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতার কারণেই চীন বিতর্কিত সমুদ্র সীমানায় আগ্রাসী ভূমিকা পালন করছে। তবে এ ব্যাপারটি যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে মোকাবিলা করবে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলেননি।

অভিবাসন: যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম অভিবাসন বন্ধ রাখা, মুসলিম মার্কিন নাগরিকদের ওপর নিয়মিত নজরদারি ও সার্বিকভাবে মুসলমানদের ওপর নানা ধরনের নিষেধাজ্ঞার ভার চাপানো দরকার বলে মত ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি সীমান্তে দেয়াল বসিয়ে মেক্সিকানদের অবৈধ অনুপ্রবেশ প্রতিরোধ করতে চান। অন্যদিকে হিলারি মেক্সিকান ও মুসলিম অভিবাসীদের বের করে দেয়ার পক্ষে নন। তবে অভিবাসন আইনে বড় ধরনের সংস্কার করতে চান হিলারি। আর এই সংস্কারের মধ্য দিয়েই তিনি অবৈধদের যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব দিতে চান (ইত্তেফাক, ০৪ নভেম্বর ২০১৬)।

পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরও কিছু মন্তব্য/পর্যবেক্ষণ:
১. ট্রাম্প ইরাক-লিবিয়া আক্রমণ সমর্থনই করেন না, তিনি চান মার্কিন সরকার গিয়ে ইরাক-লিবিয়ার তেলক্ষেত্র দখল করুক। আবার ভদ্রলোকের সিরিয়া সমাধান হল, সৈন্য নামিয়ে সিরিয়ার একটা অংশ নিজ আয়ত্তে নিতে হবে; সেখানে শরণার্থীরা আশ্রয় পাবেন এবং সেখান থেকে মুহুর্মুহু বোমা ফেলতে হবে সিরিয়ার বাকি অংশের ওপর।
২. বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনা হোক সব মার্কিন সেনাদের। এর বদলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও সৌদি আরবকে নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার গড়ে তোলার অনুমতি প্রদান করা হোক।
৩. ওবামার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি রদ করার কঠোর সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। অথচ উক্ত কর্মসূচিটি অতিউচ্চ ব্যয়ের বিপরীতে সন্দেহজনক সুফলের জন্য কুখ্যাত। এরপরও ট্রাম্প নাছোড়বান্দা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াবেন এবং বিভিন্ন সামরিক ইস্যুতে মনোযোগ বাড়াবেন। ট্রাম্পের দুঃখ, সেনাবাহিনী তার আগের ‘শক্তি-সামর্থ্য থেকে সরে যাচ্ছে’; কেননা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মতো ডুমুরের ফুল নিয়ে অযথা বিস্তর মাথা ঘামাচ্ছেন মার্কিন জেনারেলরা (!)।
৪. ট্রাম্পের মতে, ন্যাটো, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সমরাস্ত্র বিনামূল্যে ব্যবহার করছে, ৬০ হাজার সেনা দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানে মোতায়েন করা আছে। এতসব করেও সেখানে শান্তি আনা যাচ্ছে না। বরং দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থেকে উত্তর কোরিয়াকে শক্তি অর্জন করতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিবছর এসবের জন্য আমেরিকা বিপুল অর্থ ব্যয় করে। এছাড়া চীনের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনের কারণে প্রতি বছর আমেরিকা ৮০০ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সারা পৃথিবী আমেরিকার সেনা ছড়িয়ে আছে। তাই প্রেসিডেন্ট হলে কোথায় সেনা লাগবে, তা নতুন করে সাজাতে চান ডোনাল্ড ট্রাম্প।
৫. ট্রাম্পের মতে, মার্কিন সেনাবাহিনীর সম্পদ বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে। তারপরও আইএসের সামাল দেয়া যাচ্ছে না। তার মতে, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা পাচ্ছে না। যেমন, মিসরের হোসেইনি মোবারকের কাছ থেকে কী পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র? ট্রাম্প বলেন, ‘ইরানের পরমাণু চুক্তি নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে ইসরাইল। মিত্র দেশগুলো মনে করছে, আমেরিকা আর তাদের বিশ্বাস করছে না। রাশিয়া ও চীনের মতো দেশ যুক্তরাষ্ট্রকে সম্মান করে না। তাই আমার পররাষ্ট্রনীতি হবে আগে আমেরিকা, তারপর অন্যসব।’

কোন রাজ্যে কত ইলেক্টোরাল ভোট:
# ৩টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: আলাস্কা, ডেলাওয়ার, ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়া, মন্টানা, নর্থ ডেকোটা, সাউথ ডেকোটা, ভারমন্ট, য়ুমিং (মোট ৩/৮=২৪)
# ৪টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: হাওয়াই, ইদাহো, মেইন, নিউ হ্যাম্পশায়ার, রোদ আইল্যান্ড (মোট ৪/৫=২০টি)
# ৫টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: নেব্রাস্কা, নিউ মেক্সিকো, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া (মোট ৫/৩=১৫টি)
# ৬টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: আরকানসাস, লুয়া, কানসাস, মিসিসিপি, নেভাডা, উটাহ (মোট ৬/৬=৩৬টি)
# ৭টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: কানেক্টিকাট, ওকলাহামা, ওরিজন (মোট ৭/৩=২১টি)
# ৮টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: কেনটাকি, লুইজিয়ানা (মোট ৮/২=১৬টি)
# ৯টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: এলাবামা, কলোরাডো, সাউথ ক্যারোলিনা (মোট ৯/৩=২৭টি)
# ১০টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ম্যারিল্যান্ড, মিনোসোটা, মিসৌরি, উইসকনসিস (মোট ১০/৪=৪০টি)
# ১১টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: এরিজোনা, ইন্ডিয়ানা, ম্যাসাচুয়েটস, টিনেসি (মোট ১১/৪=৪৪)
# ১২টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ওয়াশিংটন (মোট ১২/১=১২)
# ১৩টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ভার্জিনিয়া (মোট ১৩/১=১৩)
# ১৪টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: নিউ জার্সি (মোট ১৪/১=১৪)
# ১৫টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: নর্থ ক্যারোলিনা (মোট ১৫/১=১৫)
# ১৬টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: জর্জিয়া, মিশিগান (মোট ১৬/২=৩২)
# ১৮টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ওহাইও (মোট ১৮/১=১৮)
# ২০টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ইলিনয়, পেনসেলভেনিয়া (মোট ২০/২=৪০)
# ২৯টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ফ্লোরিডা, নিউইয়র্ক (মোট ২৯/২=৫৮)
# ৩৮টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: টেক্সাস (মোট ৩৮/১=৩৮)
# ৫৫টি করে ইলেক্টোরাল ভোট: ক্যালিফোর্নিয়া (মোট ৫৫/১=৫৫)

প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টে ভোট কি একইসঙ্গে
সাধারণ নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ও তার রানিংমেট বা ভাইস প্রেসিডেন্ট একসঙ্গে এক টিকিটে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ভোটারদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য একটি টিকিট দেয়া হয়। তারা একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট দিয়ে তার রানিংমেট ছাড়া অন্য প্রার্থীর রানিংমেটকে ভোট দিতে পারেন না।

আগাম ভোট দেয়ার ব্যবস্থা:
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৩৬টি অঙ্গরাজ্য এবং ডিস্ট্রিক্ট অব কলম্বিয়ায় এমন ব্যবস্থা আছে, যাতে করে ভোটাররা চাইলে নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের আগেই ভোট দিতে পারেন এবং এজন্য তাঁদের কানো কারণ দেখাতে হয় না। বাকি ১৩টি অঙ্গরাজ্যে কারণ দেখিয়ে অনুপস্থিতভাবে অর্থাৎ ডাকযোগে ভোট দেওয়া যায়। যেসব অঙ্গরাজ্যে ‘আগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা’ বা ‘আর্লি ভোটিংয়ের’ ব্যবস্থা আছে, সেখানে সশরীরে নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দেয়ার পদ্ধতি আছে। এ ছাড়া আছে ডাকযোগে ভোট দেয়ার ব্যবস্থা। অধিকাংশ রাজ্যেই ডাকযোগে ভোট দিতে চাইলে আগে থেকে অনুরোধ করতে হয়, কিন্তু এর ব্যতিক্রমও আছে। অনেকের কাছেই বিস্ময়কর মনে হবে যে, তিনটি অঙ্গরাজ্য আছে যেখানে নির্বাচনের আগেই ভোটারদের কাছে ব্যালট পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং তাঁরা চাইলে ডাকযোগে বা সশরীরে ভোট দিতে পারেন। এই তিনটি অঙ্গরাজ্য হচ্ছে ওয়াশিংটন, অরিগন ও কলোরাডো। এ ব্যবস্থা অরিগন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় ১৯৯৮ সালে, ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় ২০১১ সালে এবং কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে ২০১৩ সালে। এই তিনটি রাজ্যেই অবশ্য নির্বাচনের কমপক্ষে ১৫ দিন আগে থেকে কিছু কিছু ভোটকেন্দ্র খোলা থাকে, যাতে করে ভোটাররা চাইলে সশরীরে ভোট দিতে পারেন এবং অবশ্যই নির্বাচনের দিন ভোটকেন্দ্র খোলা রাখা হয়, তবে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা থাকে কম।

আগে আগে ভোট দেয়ার এই ব্যবস্থা বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে শুরু হয় বিভিন্ন সময়ে। সবচেয়ে আগে যেখানে ভোট দেয়া শুরু হয়েছে তা হলো মিনেসোটা এবং সাউথ ডাকোটা, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে সেখানে ভোট প্রদান শুরু হয়েছে। আইওয়াতে শুরু হয়েছে ২৯ সেপ্টেম্বর (প্রথম আলো, ০৮ অক্টোবর ২০১৬)।

নির্বাচন কেন মঙ্গলবার, কেন নভেম্বর
বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই ভোটারদের ভোট দেওয়ার হার সবচেয়ে কম। ব্যস্ততার কারণে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যান না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার শুরুর দিকে ছুটির দিনে নির্বাচনের আয়োজন করেও কোনো লাভ হয়নি। ১৮৪৫ সাল থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের দিন নির্দিষ্ট করা হয়। ওই নিয়ম চালুর সময়টাতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল কৃষিপ্রধান দেশ। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে করে কাছের ভোটকেন্দ্রে যেতে অনেক সময় লেগে যেত কৃষকদের। শনিবার ছিল ফসলের মাঠে কাজের দিন। ধর্মকর্মের কারণে রবিবার দূরে যাওয়া যেত না। আর বুধবার ছিল বাজারের দিন। মাঝখানে বাকি রইল মঙ্গলবার। এ কারণেই মঙ্গলবারকে ভোটের দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।

আর মাস হিসেবে নভেম্বরকে বেছে নেয়ার কারণ সে সময় নভেম্বর মাস পড়তে পড়তে যুক্তরাষ্ট্রে ফসল কাটা শেষ হয়ে যেত। নভেম্বরের শেষ হতেই শীত নামত জাঁকিয়ে। তাই ভোটের উপযুক্ত সময় হিসেবে বেছে নেয়া হয় নভেম্বর মাসকে।

মার্কিন নির্বাচন: প্রসঙ্গ বাংলাদেশ
অনেকে জানতে চান, হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে বা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কোনো প্রভাব তৈরি করবে কিনা। এক্ষেত্রে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে আমরা একটু ইতিহাস দেখি আসি। বারাক ওবামার প্রথম দফায় (২০০৯) সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন হিলারি। সে সময় বাংলাদেশের কিছু ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এর মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের বিষয় ছিল অন্যতম। ইউনুস ইস্যুতে হিলারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন পর্যন্ত করেছিলেন। সে সময় ‘যায় যায় দিন’ পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায় যে, ঐ টৈলিফোন কল কিছুটা তিক্তকর ছিল। আমরা বিশ্বের বহু ঘটনা থেকে জানতে পারি, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত স্বল্প মেয়াদে কম কাজ করে বরং তাদের থাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। যদি সেই টেলিফোন সংলাপ সত্যি হয় তাহলে দীর্ঘমেয়াদে হলেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে একটা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার চেষ্টা করতে পারেন হিলারি। সে প্রচেষ্টার ফলাফল কী হবে আমরা কেউ জানি না। তাছাড়া পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন এবং বিএনপিকে ছাড়া দশম জাতীয় নির্বাচন করার বিরোধী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনাও এখানে তার শেষ সময়ে সমালোচিত হয়েছিলেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগের বড় সুবিধা হচ্ছে– যুক্তরাষ্ট্র যদি বন্ধুত্বের হাত নাও বাড়ায়, তাহলে রাশিয়া ও ভারতের মতো বড় গুরুত্বপূর্ণ শক্তি আওয়ামী লীগের পাশে থাকবে। অন্যদিকে এশীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররাষ্ট্র হলো ভারত। সুতরাং ভারতকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছু করবে না বলেও অনেকে মনে করেন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টগণ:
১৭৭৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বারাক ওবামা-সহ এ পর্যন্ত ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট দেশটি পরিচালনা করেছেন। ৪৪ জনের মধ্যে জেরাল রুডলড ফোর্ডকে নির্বাচনে অংশ নিতে হয়নি। সবচেয়ে কম মেয়াদে মাত্র ৩১ দিনের জন্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। ১৭৮৯ সালের ৩০ জুন তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। প্রত্যেক প্রেসিডেন্ট হিসেবে কেউ দু’বার বেশি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট তিন মেয়াদে মোট ১২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন, যিনি জাতিসংঘ গঠনে উদ্যোগী ভূমিকা পালন করেন। শুধু তা-ই নয়, চতুর্থবারের জন্য মনোনীতও হয়েছিলেন তিনি। তবে শারীরিক অবস্থা তাঁর পক্ষে ছিল না।

এক নজরে আমেরিকান প্রেসিডেন্ট (নাম ও মেয়াদকাল):

জর্জ ওয়াশিংটন (১৭৮৯-১৭৯৭)
জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট। তিনি ভার্জিনিয়ার ওয়েস্ট ফেরল্যান্ডের পোপস ক্রিকে ১৭৩২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৮৯ সালের ৩০ জুন তিনি আমেরিকার প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৭৯২ সালে তিনি দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জর্জ ওয়াশিংটন ১৭৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর মারা যান।

জন এডামস (১৭৯৭-১৮০১)
আমেরিকার দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এডামস। তিনি ১৭৩৫ সালের ৩০ অক্টোবর ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৭৯৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জন এডামস ১৮২৬ সালের ৪ জুলাই মারা যান।

টমাস জেফারসন (১৮০১-১৮০৯)
১৭৪৩ সালের ১৩ এপ্রিল টমাস জেফারসন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮০০ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে প্রেসিডেন্ট হন। ১৮২৬ সালের ৪ জুলাই টমাস জেফারসন মারা যান।

জেমস ম্যাডিসন (১৮০৯-১৮১৭)
জেমস ম্যাডিসন ১৭৫১ সালের ১৬ মার্চ ভার্জিনিয়ার পোর্ট কনওয়েতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮০৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৩৬ সালের ২৮ জুন জেমস ম্যাডিসন মারা যান।

জেমস মনরো (১৮১৭-১৮২৫)
১৭৫৮ সালে জেমস মনরো জন্মগ্রহণ করেন। ১৮১৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ‘মনরো ডকট্রিন’ রচনার জন্য তিনি বিখ্যাত। ১৮৩১ সালের ৪ জুলাই জেমস মনরো মারা যান।

জন কুইনসি এডামস (১৮২৫-১৮২৯)
জন কুইনসি এডামস ১৭৬৮ সালে জন কুইনসি এডামস ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮২৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান।

এন্ড্রু জ্যাকসন (১৮২৯-১৮৩৭)
১৭৬৭ সালের ১৫ মার্চ এন্ড্রু জ্যাকসন জন্মগ্রহণ করেন। ১৮২৮ সালে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এন্ড্রু জ্যাকসন ১৮৪৫ সালের ৮ জুন মারা যান।

মার্টিন ভ্যান বারেন (১৮৩৭-১৮৪১)
মার্টিন ভ্যান বারেন ১৭৮২ সালে নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৩৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৩৬ সালে মার্টিন ভ্যান বারেন মারা যান।

উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন (১৭৭৩- ১৮৪১)
তিনি ১৭৭৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সেনাপ্রধান থাকা কালে আমেরিকার নবম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা দখল করেন। মৃতে্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। ৪ এপ্রিল ১৮৪১ সালে তার মৃতে্যু হয়।

জন টেইলর (১৮৪১-১৮৪৫)
জন টেইলরের জন্ম ১৭৯০ সালে। তিনি ১৮৪১ সালে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৮৬২ সালে তিনি মারা যান।

জেমস নক্স পলক (১৮৪৫-১৮৪৯)
১৭৯৫ সালে জেমস কনক্স পলক জনমগ্রহণ করেন। ১৮৪৫ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জেমস কনক্স পলক ১৮৪৯ সালের ১৫ জুন মারা যান।

জ্যাকারি টেইলর (১৮৪৯-১৮৫০)
জ্যাকারি টেইলর ১৭৭৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৪৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জ্যাকারি টেইলর ১৮৫০ সালে মারা যান।

মিলার্ড ফিলমের (১৮৫০-১৮৫৩)
১৮০০ সালে নিউইয়র্ক মিলার্ড ফিলমের জন্মগ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্ট টেইলরের মৃত্যু পর তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। মিলার্ড ফিলমের ১৮৭৪ সালে মারা যান।

ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স (১৮৫৩-১৮৫৭)
১৮০৪ সালের ২৩ নভেম্বর ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স ১৮৬৯ সালে মারা যান।

জেমস বুকানান (১৮৫৭-১৮৭১)
জেমস বুকাননের জন্ম ১৭৯১ সালে। ১৮৫৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জেমস বুকানন ১৮৬৮ সালে মারা যান।

আব্রাহাম লিঙ্কন (১৮৬১-১৮৬৫)
আব্রাহাম লিঙ্কন ১৮০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ক্রীতদাস প্রথা উচ্ছেদ করার কারণে তিনি জগদ্ববিখ্যাত হয়ে আছেন।

ইউলিসেস সিম্পসন গ্রান্ট (১৮৬৯-১৮৭৭)
ইউলিসেস সিম্পসন গ্রান্ট ১৮২২ সালের ২৭ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৭২ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। ইউলিসেস সিম্পসন গ্রান্ট ১৮৮৫ সালে মারা যান।

রাদারফোর্ড বিরচার্ড হায়েস (১৮৭৭-১৮৮১)
রাদারফোর্ড বিরচার্ড হেস ১৮২২ সালের ৪ অক্টোবর ডেলাওয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৭৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৯৩ সালের ৭ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

জেমস অ্যাব্রাস গারফিল্ড (১৮৮১)
জেমস অ্যাব্রাস গারফিল্ড ১৮৩১ সালের ১৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৮৮১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি এক যুবকের গুলিতে নিহত হন।

চেস্টার অ্যালান আর্থার (১৮৮১-১৮৮৫)
১৮২৯ সালের ৫ অক্টোবর চেস্টার অ্যালান আর্থার জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮১ সালে প্রেসিডেন্ট গারফিল্ড নিহত হওয়ার পর তার স্থলাভিষিক্ত তিনি। চেস্টার অ্যালান আর্থার ১৮৮৬ সালের ১৮ নভেম্বর মারা যান।

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড (১৮৮৫-১৮৮৯)
স্রোভার ক্লিভল্যান্ডের জন্ম ১৮৩৭ সালের ১৮ মার্চ। তিনি ১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। স্রোভার ক্লিভল্যান্ড ১৯০৮ সালের ২৪ জুন মারা যান।

বেঞ্জামিন হ্যারিসন (১৮৮৯-১৮৯৩)
বেঞ্জামিন হ্যারিসন ১৮৩৩ সালের ২০ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৮৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বেঞ্জামিন হ্যারিসন ১৯০১ সালের ১৩ মার্চ মারা যান।

উইলিয়াম ম্যাককিনলে (১৮৯৭-১৯০১)
আমেরিকার ২৫তম প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ম্যাককিনলে ১৮৪৩ সালের ২৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৮৯৭ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯০১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর লিওন জোলাগাজন্স নামে এক সন্ত্রাসীর গুলিতে উইলিয়াম ম্যাককিনলে মারা যান।

থিওডর রুজভেল্ট (১৯০১-১৯০৯)
থিওডর রুজভেল্ট ১৮৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর নিউইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৯৮ সালে উইলিয়াম ম্যাককিনলের মৃত্যু পর তিনি আমেরিকার কনিষ্ঠতম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯০৪ সালে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। থিওডর রুজভেল্ট ১৯১৯ সালের ৬ জানুয়ারি মারা যান।

উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট (১৯০৯-১৯১৩)
উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট ১৮৫৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিনসিনাটিতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৯ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩০ সালের ৮ মার্চ তিনি মারা যান।

উড্রো উইলসন (১৯১৩-১৯২১)
১৯৫৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর উড্রো উইলসন জন্মগ্রহণ করেন। ১৯১২ সালে তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯১৬ সালে তিনি পুনর্নির্বাচি হন। উড্রো উইলসন ১৯২৪ সালে ৩ ফেব্রুয়ারি মারা যান।

ওয়ারেন গ্যামালিয়েন হার্ডিং (১৯২১-১৯২৩)
১৯২০ সালে ওয়ারেন গ্যামালিয়েন হার্ডিং আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯২৩ সালের ২ আগস্ট তিনি সানফ্রান্সিসকোতে মারা যান।

কেলভিন কুলিজ (১৯২৩-১৯২৯)
কেলভিন কুলিজ আমেরিকার ৩০তম প্রেসিডেন্ট। ১৮৭২ সালের ৪ জুলাই ডারমন্টের প্রাইমাউথে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৩৩ সালের ৫ জানুয়ারি তিনি মারা যান।

হার্বার্ট ক্লার্ক হুভার (১৯২৯-১৯৩৩)
হার্বার্ট ক্লার্ক হুভার ১৮৭৪ সালের ১০ আগস্টে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯২৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। হার্বার্ট ক্লার্ক হুভার ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর মারা যান।

ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট (১৯৩৩-১৯৪৫)
১৮৮১ সালের ৩০ জানুয়ারি ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি তিন মেয়াদে প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৪৫ সালের ১২ এপ্রিল ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্ট মারা যান।

হ্যারি এস ট্রুম্যান (১৯৪৫-১৯৫৩)
হ্যারি এস ট্রুম্যান ১৮৮৪ সালের ৮ মে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। হ্যারি এস ট্রুম্যান ১৯৭২ সালের ২৬ ডিসেম্বর মারা যান।

ডেভিড আইসেনহাওয়ার (১৯৫৩-১৯৬৪)
ডেভিড আইসেনহাওয়ার ১৮৯০ সালের ১৪ অক্টোবর টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৫৬ সালে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। ডেভিড আইসেনহাওয়ার ১৯৬৯ সালের ২৮ মার্চ ওয়াশিংটনে মারা যান।

জন এফ কেনেডি (১৯৬১-১৯৬৩)
আমেরিকার ৩৫তম প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি। তিনি আমেরিকার প্রথম রোমান ক্যাথলিক প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ১৯৬১ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালের ২২ নভেম্বর জন এফ কেনেডি এক আঁততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

লিন্ডন বেইনস জনসন (১৯৬৩-১৯৬৯)
বেইনস জনসন ১৯৩৮ সালের ২৭ আগস্ট টেক্সাসের স্টোন ওয়ারের কাছে জন্মগ্রহণ করেন। জন এফ কেনেডি নিহত হওয়ার পর তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বেইনস জনসন ১৯৭৩ সালের ২২ জানুয়ারি মারা যান।

রিচার্ড নিক্সন (১৯৬৯-১৯৭৪)
রিচার্ড নিক্সন ১৯১৩ সালের ৯ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৯ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৭২ সালে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারীর জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ আগস্ট রিচার্ড নিক্সন পদত্যাগ করেন।

জিরাল্ড রুডল্ফ ফোর্ড জুনিয়র (১৯১৩- ২০০৬)
তিনি ১৯১৩ সালে ১৪ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হচ্ছেন আমেরিকার ৩৮তম প্রেসিডেন্ট। তিনি ২৬ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মারা যান।

জিমি কার্টার (১৯৭৭-১৯৮১)
জিমি কার্টার ১৮৯২ সালের ১ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন আমেরিকার ৩৯তম প্রেসিডেন্ট।

রোনাল্ড রিগ্যান (১৯৮১-১৯৮৯)
আমেরিকার ৪০তম প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান ১৯১১ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ইলিনয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮০ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি হলিউডের বহু ছবিতে অভিনয় করেন।

জর্জ হারবার্ট ওয়াকার বুশ (১৯৮৯-১৯৯৩)
জর্জ ওয়াকার বুশ ১৯২৪ সালের ১২ জুন ম্যাসাচুসেটসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। জর্জ ওয়াকার বুশের অন্যতম সাফল্য হলো স্নায়ুুযুদ্ধের অবসানে ভূমিকা রাখা।

বিল ক্লিনটন (১৯৯৩-২০০১)
উইলিয়াম জেফারসন বিল ক্লিনটন ১৯৪৬ সালের ১৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। আমেরিকার ৪২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯৯৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি দ্বিতীবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ছিলেন অনেকটাই সফল যদিও প্রেসিডেন্সির শেষ দিকে নারী কেলেঙ্কারী তাকে কিছুটা বেকায়দায় ফেলে দেয়।

জর্জ ডব্লিউ বুশ (২০০১ সাল থেকে ২০০৮)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের (৪৩তম) প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৬ সালের ৬ জুলাই। ২০০১ সাল থেকে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

বারাক ওবামা (২০০৯ সাল থেকে বর্তমান)
৪৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দু মেয়াদে ২০০৮ থেকে ক্ষমতায় আছেন বারাক হোসেন ওবামা। তিনি ০৪ আগস্ট ১৯৬১ সালে জন্মগ্রহণ করেন। অক্টোবর ৯, ২০০৯ তারিখে ওবামাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে তিনি ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেন।

মার্কিন ভোটার সংখ্যা:
যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা ৩২ কোটি, যাদের মধ্যে ৬২ শতাংশ (হিসপানিক নয়) শ্বেতাঙ্গ। আর ভোটে দিতে নিবন্ধন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ২০ কোটি ভোটার।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা:
ক্স গ্রোভার ক্লিভিল্যান্ড ২২তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেয়ার পর মাঝে এক মেয়াদে বিরতি দিয়ে ২৪তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফের ক্ষমতায় আসেন। সে হিসেবে মোট ৪৩ জন প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেছেন।
ক্স যুক্তরাষ্ট্রের চারজন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকাকালে স্বাভাবিক কারণে (শারীরিক অসুস্থতাজনিত) মৃত্যুবরণ করেন। তারা হলেনÑ উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন, জ্যাচারি টেইলর, ওয়ারেন জি হার্ডিং এবং ফ্রাংকলিন ডি. রুজভেল্ট।
ক্স দায়িত্ব পালনকালে চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। তারা হলেনÑ আব্রাহম লিঙ্কন, জেমস এ গার্ফিল্ড, উইলিয়াম ম্যাকাকিনলে এবং জন এফ কেনেডি।
ক্স ১৮৪১ সালে মাত্র ৩২ দিন ক্ষমতায় থেকে সবচেয়ে স্বল্প মেয়াদি প্রেসিডেন্ট হন উইলিয়াম হেনরি হ্যারিসন।
ক্স সবচেয়ে বেশি সময় অর্থাৎ ১২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন ফ্রাংকলিন ডি রুজভেল্ট।
ক্স ১৮২৮ সালে সব শ্রেণির জনগণের ভোটে প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হন অ্যান্ড্রু জ্যাকসন (১৭তম প্রেসিডেন্ট)। এর আগে ভূমিহীনরা ভোট দিতে পারত না। ১৯২০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা ভোটাধিকার পায়।
ক্স মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এ পর্যন্ত চারজন প্রেসিডেন্ট জনগণের ভোটে হারলেও ইলেকটোরাল ভোটে জিতে প্রেসিডেন্ট হন। তারা হলেন– জন কিউ, অ্যাডামস, রাদাফোর্ড বি. হায়েস, বেঞ্জামিন হ্যারিসন ও জর্জ ওয়াকার বুশ।

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কিছু অদ্ভুত তথ্য:
১. আব্রাহাম লিঙ্কন ক্ষমতায় থাকাবস্থায় একটি জটিল ডিভাইস আবিষ্কার করেন, যাতে বাতাস ঢুকিয়ে খরস্রোতা নদীতে নৌকা ভাসানো যেত। তিনি সবচেয়ে লম্বা প্রেসিডেন্টও, উচ্চতা ছয় ফুট চার ইঞ্চি। আবার তিনিই প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি দাড়ি রেখেছিলেন।
২. গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র প্রেসিডেন্ট, যার বিয়ে হয়েছিল হোয়াইট হাউসেই। ট
৩. মাস জেফারসন হাঁটার দূরত্ব মাপার যন্ত্র পেডোমিটার, খাবার পরিবেশনের ঘূর্ণায়মান যন্ত্র লেজি সুসান ও ডাম্ব ওয়েটার বা ছোট লিফট আবিষ্কার করেছিলেন।
৪. প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে স্বল্পশিক্ষিত ছিলেন অ্যান্ড্রু জনসন। স্ত্রীই তাকে পড়ালেখা শেখান। অন্যদিকে জেমস মনরো কলেজের গণ্ডিও পার হতে পারেননি।
৫. মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মাথা নুইয়ে অভিবাদন জানাত সবাই। জেফারসন অতিথিদের সঙ্গে হ্যান্ডশেকের প্রথা চালু করেন।
৬. প্রেসিডেন্ট জেমস মেডিসন হাঁটু পর্যন্ত লম্বা পোশাকের বদলে ট্রাউজার পরিধানের প্রথা চালু করেন। অধিকাংশ প্রেসিডেন্টই শরীরচর্চা ও খেলাধুলাকে গুরুত্ব দিতেন।
৭. রোনাল্ড রিগান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী ছিলেন। যখন তিনি হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন তখন তার বয়স ছিল ৭৭ বছর।
৮. কেলভিন কোলিজ বিখ্যাত ছিলেন কম কথা বলার জন্য। এ নিয়ে একটি কৌতুকও প্রচলিত রয়েছে। একবার এক নারী বাজি ধরেন, প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে দুয়ের বেশি শব্দের কথা আদায় করার জন্য। ওই নারী এক অনুষ্ঠানে তার পাশে বসে বলেন, জনাব কোলিজ, আজ আপনাকে কথা বলতেই হবে। কারণ আমি বাজি ধরেছি, আপনার কাছ থেকে দুয়ের অধিক শব্দের কথা আদায় করার। কিন্তু নারীটিকে হতাশ করে কোলিজ জবাব দিলেন– আপনি হেরেছেন।
৯. প্রেসিডেন্ট জেমস বুচানান ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র ব্যাচেলর প্রেসিডেন্ট।
১০. প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি প্রতি মিনিটে দু হাজার শব্দ পড়তে পারতেন।
১১. উইলিয়াম হাওয়ার্ড টাফট ছিলেন সবচেয়ে বিশালদেহী প্রেসিডেন্ট। তার ওজন ছিল ৩৫০ পাউন্ড।
১২. প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান একজন খ্যাতিমান চলচ্চিত্র অভিনেতা।
১৩. জেমস মেডিসন মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে সবচেয়ে বেঁটে ছিলেন। তার উচ্চতা ছিল পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি।
১৪. প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন হ্যারিসনের সময়ে হোয়াইট হাউসে বৈদ্যুতিক বাতি লাগানো হয়। ওই বাতি দেখে বেঞ্জামিন ও তার স্ত্রী দু জনই প্রথমে বেশ ভয় পান। বেঞ্জামিন কখনো নিজ হাতে বাতি জ্বালাতেনও না।
১৫. যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।


প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০১৬

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *