ভারতের সব চাওয়াই পূরণের বিপরীতে বাংলাদেশের প্রাপ্তি সামান্যই

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বহুল আলোচিত ভারত সফর তিনটি চুক্তি এবং দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও যুক্ত ইশতেহার প্রকাশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে। এই সফরকে ঘিরে জনগণের মধ্যে অনেক আশার সঞ্চার হয়েছিল। কারণ বড় প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো বিষয় জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, টিপাইমুখ বাঁধ, বাণিজ্য ঘাটতি, এশিয়ান হাইওয়ের নামে করিডোর প্রদান, সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে অহরহ বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যু, তিনবিঘা করিডোর, সমুদ্রসীমার মীমাংসা ও তালপট্টি দ্বীপের সমস্যা ইত্যাদি। এসব বিষয়ে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর দিল্লী সফর থেকে এসব বিষয়ে খুব বেশি সুখবার্তা বয়ে আনতে পারেননি।

তবে ভারত সফরে দু দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরকালে সমঝোতা স্মারক প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব সমঝোতার মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশ-ভারত নয়, নেপাল-ভুটানসহ দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশ উপকৃত হবে। বিশেষ করে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি আসবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর এই অর্জন সমগ্র জাতিকে গৌরবান্বিত করেছে। তাঁর ঐতিহাসিক ভারত সফরের মধ্য দিয়ে দু দেশের মধ্যে যে অনাস্থা ও অবিশ্বাসের সম্পর্ক ছিল, তা দূর হয়েছে। বিশেষ করে দু দেশের মধ্যকার বিরাজমান আস্থার সংকট দূরীকরণে প্রধানমন্ত্রীর এ সফর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। এই সফরের মাধ্যমে প্রতিবেশী দু দেশের মধ্যকার বহুমাত্রিক সম্পর্কে বিশেষ করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। আগামীতে নতুন এসব সম্পর্ক আরও ভিন্নমাত্রা পাবে। দু দেশের মধ্যে সম্পর্কের যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্বায়নের যুগে সারাবিশ্বের নজর কাড়তে সক্ষম হবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরকে মুল্যায়ন করলে দেখা যায় বাংলাদেশের কাছে ভারতের সব চাওয়াই পূরণ হয়েছে। মনমোহন-হাসিনা শীর্ষ বৈঠকের পর প্রকাশিত দু দেশের যুক্ত ইশতেহার বা ঘোষণায় এর প্রতিফলন ঘটেছে। দু দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত নিরাপত্তা সংক্রান্ত তিনটি চুক্তি ও দুটি সম্মত কার্যবিবরণীতেও ভারতের ইচ্ছার বাস্তবায়ন হয়েছে। বলা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে অনেকটা একতরফাভাবেই রেল, সড়ক ও নৌ ট্রানজিট এবং এসব সুবিধা কাজে লাগিয়ে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানির সুবিধাও দিয়েছেন। বাংলাদেশের যে কয়েকটি সমস্যা সমাধান হওয়ার কথা ছিল তার কিছুই হয়নি। বাংলাদেশের সব বিষয়ই ভবিষ্যতের জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে একটি দুর্বল দেশের চুক্তির যে অবস্থা হয়, দিল্লিতে দু দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে সে ধরনেরই অসম চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে।

যৌথ ঘোষণা অনুযায়ী মূলত বাংলাদেশে ভারতের জন্য ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে রেল ও সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলার ঋণ, ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের সরঞ্জাম যাওয়ার সুযোগ দেয়ার বিনিময়ে ওই কেন্দ্রের উদ্বৃত্ত ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার সুবিধা পাবে বলে বাংলাদেশ আশ্বাস পেয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া সহজতর করতে আখাউড়া থেকে ভারতের আগরতলা পর্যন্ত রেললাইন সংস্কার ও উন্নত করতে ভারতের ঋণের টাকা ব্যয় হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে যখন ১০ বিলিয়ন ডলারের বিশাল রিজার্ভ পড়ে আছে তখন এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নেয়ার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ভারতের ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে ১০০ কোটি ডলারের ঋণ সম্পর্কে বলা যায়, দ্বিপাক্ষিক ঋণচুক্তি হতে পারে, তবে তা নিজের স্বার্থ বিলিয়ে দিয়ে নয়। এই ঋণের টাকা বাংলাদেশকে সুদে-আসলে পরিশোধ করতে হবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে বাংলাদেশের টাকায় ভারত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবে। ভারত ১০০ কোটি ডলারের যে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে, তা দিয়ে ভারত থেকেই পণ্য ও সার্ভিস কিনতে হবে।

ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়েও চুক্তি হয়েছে। এই বিদ্যুৎ আনার জন্য বাংলাদেশকে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করতে হবে, তা নিজ দেশের মাটিতে করলে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সাশ্রয় অনেক বেশি হতো। সে চিন্তা না করে ভারতের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানির এ চুক্তির যৌক্তিকতা বোঝার উপায় নেই। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি যেখানে তিন হাজার মেগাওয়াট, সেখানে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে যে বিরাজমান সমস্যার খুব একটা সমাধান হবে না তা খুবই স্পষ্ট করেই বলা যায়।

ভারত বাংলাদেশকে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য ট্রানজিট দেবে। কিন্তু বাংলাদেশও ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর এবং আশুগঞ্জ নদীবন্দর, রেলপথ ও সড়কপথ ব্যবহারের সুবিধা দেবে। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শুধু ভারত নয়, নেপাল-ভুটানও চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের সুবিধা পাবে। তিনি বলেন, ‘এখনকার যুগে আমরা দরজা আটকে বসে থাকতে পারি না। সব ঘরে কাঁটা মেরে বসে থাকতে পারি না। বিশ্বের কেউ ঘরের দরজা বন্ধ করে বসে থাকতে পারে না। বাংলাদেশ ভারতকে যে কানেক্টিভিটি দিচ্ছে, সেটা শুধু দ্বিপাক্ষিকভাবে নয়, আঞ্চলিক ভিত্তিতেই দিচ্ছে Ñ নেপাল-ভুটানও যাতে ব্যবহার করতে পারে।’ কিন্তু এই যাতায়াত ব্যবস্থার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য ব্যবস্থার কী হবে, তার পূর্ণ বিবরণ জনগণের অবগতির জন্য স্পষ্ট করা দরকার। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধা আমরা নেপাল এবং ভুটানকে দিতে চাই। সেই সুবিধা ভারত বাস্তবায়ন হতে দিবে কিনা তা নিয়ে আস্থার সংকট এখনো কাটেনি। মংলা বন্দরের নাব্যতা নেই। আমাদের ছোট ছোট জাহাজই ভিড়তে পারে না। তারপর ভারতীয় জাহাজ আসবে কীভাবে সেটা প্রশ্নসাপেক্ষ। চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের কন্টেইনারগুলোই হ্যান্ডলিং করতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। তার ওপর ভারতের কন্টেইনার ব্যবহার করবে কখন? কাজেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গবেষণা করা প্রয়োজন ছিল যে, আমাদের এই বন্দর দুটির সক্ষমতা কতটুকু আছে?

ভারতের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে বাংলাদেশের একটি বিশাল বাজার ছিল। এটি এখন হাতছাড়া হবে। তাছাড়া ওই সমুদ্রবন্দর দুটি ব্যবহারের জন্য ভারত সড়ক ও রেলপথে ট্রানজিট সুবিধাও পাবে। এটিই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও বিপজ্জক। এতে বাংলাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত রয়েছে। ভারতকে কোনো ধরনের শর্ত ছাড়াই একতরফাভাবে ট্রানজিট সুবিধাসহ এ দুটি বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার অর্থই হচ্ছে ব্যবসায়িকভাবে সেই সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবেও বাংলাদেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়া।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৩ দশমিক ২৭৪ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ ভারতে রফতানি করেছে ৩৫৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এই ঘাটতি কমিয়ে আনতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বারবার অনুরোধ করা হলেও ভারত সাড়া দিচ্ছে না। বাংলাদেশি অর্ধ সহস্রাধিক পণ্যের বিশাল নেতিবাচক তালিকা রয়েছে ভারতের। বাংলাদেশি প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক পণ্য ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা সৃষ্টির মাধ্যমে ভারত তাদের দেশে প্রবেশ করতে দেয় না।

তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ে কোনো চুক্তি না করে ভারত বিষয়টিকে এমনভাবে ঝুলিয়ে রেখেছে যাতে স্পষ্টই বুঝা যায়, পানিবণ্টনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তার ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর তাঁর ভারত সফরে অন্তত ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমানের সময়ে করা তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা স্মারক ও ৮৩ সালে করা চুক্তির নবায়ন কিংবা নতুন করে তিস্তা চুক্তি করতে পারবেন বলে আশা করা হয়েছিল, কিন্তু তাও হয়নি। তবে শুকনো মৌসুমে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সীমান্তের দু পাড়ের মানুষ অবর্ণনীয় দুঃখ-দুর্দশায় ভোগেন সে বিষয়টি দু প্রধানমন্ত্রী তাদের আলোচনায় স্বীকার করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির বিষয়টি ত্বরান্বিত করার পক্ষে মত দেন দু নেতা। দু প্রধানমন্ত্রী তাদের পানিসম্পদ মন্ত্রীদের এ বছরের মার্চের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক করার নির্দেশ দেন। বৈঠকে বলা হয়েছে, তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তির স্পিরিট অনুযায়ী হবে। যদি এটিই হয় তাহলে তা বাংলাদেশের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। কেননা গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশকে গঙ্গা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করার লাইসেন্স পেয়ে গেছে। চুক্তির আগে বাংলাদেশ যে পরিমাণ পানি পেত, চুক্তির পর তা অনেক কমে গেছে। চুক্তির দুর্বলতার সুযোগে গঙ্গার পানি একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে ভারত। কাজেই ওই ধরনের চুক্তি হলে বাংলাদেশ পানি পাবে না।
টিপাইমুখে ভারতের বাঁধ নির্মাণ নিয়ে এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জনগণের উৎকণ্ঠার সুরাহা শীর্ষ বৈঠকে হয়নি। বরং বাংলাদেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়, এমন কিছু টিপাইমুখে ভারত করবে না। যৌথ ঘোষণায় দু দেশের এ সম্মতির কথা বলে দিয়ে প্রকারান্তরে টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণের বৈধতাই দিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগেও ভারত প্রতিশ্র“তি দিয়েছিল, তারা এ বাঁধের মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্ষতি হতে দেবে না। কিন্তু ক্ষতি কি হয়নি?

দেশবাসী আরও উদ্বেগের মধ্যে আছেন অপরাধ সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান, আইনি সহায়তা ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দি বিনিময় চুক্তি নিয়ে। কারণ, এসব চুক্তির সুযোগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বন্দি বিনিময় চুক্তি বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। এই চুক্তির ফলে অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে। ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যে যেসব স্বাধীনতাকামী সংগঠন আছে, এই চুক্তির মাধ্যমে তাদের সঙ্গে আমাদের বৈরিতার সৃষ্টি হবে। কারণ বিদ্রোহীরা যদি অনুপ চেটিয়ার মত বাংলাদেশে প্রবেশ করে তখন বাংলাদেশ সরকার বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ভারতের কাছে হস্তান্তর করবে। এতে তারা আমাদের শত্রু হবে। আর বাংলাদেশও বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়বে।

বাংলাদেশের নিরাপত্তার উদ্বেগগুলো অনুধাবন করা দরকার। ভারত আমাদের সর্ববৃহৎ প্রতিবেশী। আমরা চাইবো আমাদের জাতীয় স্বার্থরক্ষা করতে। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে ভারতের সঙ্গে সমদ্রসীমা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিরোধ আমাদের নিরাপত্তার প্রতি অন্যতম হুমকি। ১৯৭৪ সাল থেকে সমুদ্রসীমা অমীমাংসিত রয়ে গেছে। ৬.৫ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমান্ত চিহ্নিতকরণের সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

যৌথ ঘোষণায় বলা হয়েছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্যপদে ভারতের প্রার্থিতাকে নীতিগত সমর্থন জানিয়েছেন। এরকম প্রকাশ্য অবস্থান নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পেতে আগ্রহী বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় দাতা জাপান এবং ভারতের সদস্যপদ লাভের বিরোধিতাকারী চীনের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের নতজানু পররাষ্ট্রনীতিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের গত এক বছরে ভারতীয় বিএসএফ সীমান্তে কমপক্ষে ৯৬ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যার মতো মানবাধিকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদও করার সাহস দেখাননি প্রধানমন্ত্রী। দহগ্রাম ও আঙ্গরপোতা ছিটমহলের অধিবাসীরা যাতে বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সার্বক্ষণিক ও সহজ যাতায়াত সুবিধা পায়, এ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে এ বিষয়ে কিছুই হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দু প্রতিবেশী দেশের মধ্যে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমরা দু দেশের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করব। এ ছাড়া এ অঞ্চলের উন্নয়নেও কাজ করব। তিনি জানান, তাঁর সফরের ফলে দু দেশের সম্পর্কে নতুন যুগের সূচনা হবে। আমরাও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একমত পোষণ করি। কিন্তু একইসঙ্গে এটাও মনে রাখা দরকার যে, একপক্ষীয় সম্পর্ক কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সফরে বাংলাদেশের কাছে ভারতের সব চাওয়াই পূরণ হয়েছে, বিপরীতে বাংলাদেশ পেয়েছে শুধুই আশ্বাসের বাণী। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী কোনো বিষয়ে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে পারেননি। যেমন, চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগের বিনিময়ে আমরা অনেক কিছু পেতে পারতাম। মুলকথা হলোÑ এ সফর থেকে বাংলাদেশ পেয়েছে সামান্যই। অন্যদিকে ভারতের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে যেসব বিষয়ে সম্মতি দেয়া হয়েছে, তা দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশের স্বার্থের জন্য অনুকূল হবে না।

চিন্তা, ১৬ জানুয়ারি ২০১০

Leave a Reply

Your email address will not be published.