বাবার জন্য ভালবাসা

পিতাই স্বর্গ, পিতাই ধর্ম এবং পিতাই পরম তপস্যা, পিতা প্রীত হলে সকল দেবতা প্রীত হন’ শাস্ত্রের এ বাণী থেকে উপলব্ধি থেকে করা যায় বাবার প্রতি সন্তানের ভালবাসা ও দায়িত্ব কতটুকু। গ্রীক কবি হোমার আরও বাড়িয়ে বলেছেন- ‘সেই জ্ঞানী সন্তান, যে তার বাবাকে জানে।’

সত্যিই তাই। একটি শিশু যখন অপিরিচিত এই পৃথিবীতে, সম্পূর্ণ একা, তখন বাবাই দেন ভরসা। জীবনে চলার পথে বাবাই বলিষ্ঠ সাহচর্য দেন, দেন সঠিক পথের দিশা, একইসঙ্গে ভাল কাজে দেন অনুপ্রেরণা। আরও দেন জীবনে এগিয়ে যাওয়ার ছবক। তাইতো বাবা শব্দটি নিরাপত্তা আর পরম নির্ভরতার প্রতীক। একটি শিশু জন্ম নেয়ার পর বড় হওয়ার সাথে সাথে তাকে কত কিছু না চেনাতে হয়। ঐ দূরের গাছগাছালি, বিশাল নীলাকাশ, আর চড়–ই-বাবুই পাখির কাহিনী আরও কত কী! কিন্তু কখনো তাকে শেখাতে হয় না এটা তোমার বাবা, এটা তোমার মা। প্রকৃতি তাকে চিনিয়ে দেয় পরম নির্ভরতার প্রতীক বাবা-মাকে।

সন্তানের জীবনে যতই সাফল্য আসুক না কেন বাবার ভালবাসার ছায়া থেকে কেউ দূরে সরে যেতে চায় না। সন্তান যত বড়ই হোক সেতো তার সন্তান। অভিমান আর অবহেলার পরিমাণ যত বেশিই হোক না কেন বাবার স্নেহের দরজাটা সবসময়ই খোলা থাকে সন্তানের জন্য। তাই বাবাই হতে পারেন সন্তানের সবচেয়ে বড় বন্ধু। বাবাকে অনেক কথাই খুব সহজে বলা যায়। সদিচ্ছা নিয়ে বাবার সাথে মিশতে পারলে বাবা হয়ে উঠে সারা জীবনে ছায়ার মতো বন্ধু।

১৯৯৩ সালে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাবার সান্নিধ্যে যে সন্তান বেশি পরিমাণ থাকবে, অন্যদের চেয়ে তার জ্ঞান-বুদ্ধি বেশি হবে। একজন বাবাই শিশুর আচরণ ও সামাজিকায়নের ওপর ইতিবাচক প্রভাব এনে দিতে পারেন। অনেক সময় বাবাকে পেশাগত কারণে ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়, যে কারণে বাবা তার সন্তানকে বেশি সময় দিতে পারেন না। এক্ষেত্রে সন্তানকে বুঝতে হবে যে, বাবা সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য, পরিবারের উন্নতির জন্যই পরিশ্রম করে চলেছেন।

বাবা হলেন সন্তানের জন্য একটি ছায়াস্বরূপ, যে ছায়াতলে রয়েছে মায়া, মমতা আর ভালবাসা। একজন সন্তানের কাছে বাবা মানেই এক অনুপম আদর্শ। অন্যদিকে সন্তানরা বাবার স্নেহের পাত্র। যেমনি বলে গিয়েছেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর- ‘সন্তানের ভাল-মন্দ সবকিছু অনেকটাই বাবার ওপর নির্ভর করে। এজন্যই স্বভাবতই বাবার স্নেহের সঙ্গে শাসন আছে এবং সন্তানের ভক্তির সঙ্গে ভয় আছে। পরিশেষে, বিখ্যাত অস্ট্রীয় মনোরোগ চিকিৎসক সিগমন্ড ফ্রয়েড-এর একটি উক্তি দিয়ে শেষ করছি-  ‘শৈশবে বাবার কাছ থেকে পাওয়া নিরাপত্তার চেয়ে বড় কিছুর কথা আমি ভাবতেই পারি না’।

২৫ এপ্রিল ২০০৮

Leave a Reply

Your email address will not be published.