সিভিল সোসাইটি: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

সিভিল সোসাইটির সংজ্ঞা ও ধারণা: রোমান ভাষায় ‘রাষ্ট্র’ মানে ‘সিভিটাস’। এই ‘সিভিটাসে’র অধিবাসীরাই ‘সিভিল’। গ্রিস ও রোমে রাষ্ট্র ছিল নগরকেন্দ্রিক। ফলে নগরের বাসিন্দারাই ছিল নাগরিক। যার অর্থ দাঁড়ায়, ‘সিভিটাস’ মানে রাষ্ট্র। ‘সিভিল’ মানে রাষ্ট্রের নাগরিক। আর ‘সোসাইটি’ মানে সমাজ। সুতরাং ‘সিভিল সোসাইটি’ মানে হচ্ছে ‘নাগরিক সমাজ’ বা ‘নগর সমাজ’।

ক্লাসিক্যাল ধারণা অনুযায়ী, যে কোনো রাষ্ট্রের দুটি অংশ আছে। একটি হলো সরকার, আর আরেকটি জনগণ বা সিভিল। এই সিভিল এবং রাষ্ট্রের সার্বিক দেখভাল করার প্রতিনিধিরাই হলেন ‘সিভিল সোসাইটি’। আর সরকার যেহেতু জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়, সেহেতু সরকার জনগণের প্রতি তার অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে কিনা তা তদারকি করার জন্য একটি সত্যিকার ‘সিভিল সোসাইটি’ প্রয়োজন, যে সিভিল সোসাইটি হবে দলনিরপেক্ষ ও দেশপ্রেমিক।

সিভিল সোসাইটির ধরন ও বৈশিষ্ট্য: আঞ্চলিক ও জাতীয় অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সিভিল সোসাইটির ভূমিকা, স্থান, কাল ও পাত্রভেদে বৈচিত্র্যময়। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই সিভিল সোসাইটি গোষ্ঠী-চিন্তা দ্বারা তাড়িত হয়ে রাষ্ট্রের একক প্রাধান্য বিস্তারের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সংগ্রামে লিপ্ত ছিল। তাই দ্বন্দ্বের মূল জায়গাটা ছিল রাষ্ট্রের সাথে বাজারের সম্পর্ক, রাষ্ট্রের সাথে নাগরিকের সম্পর্ক।

সিভিল সোসাইটি সবসময় সংগঠিত নাও থাকতে পারে। অনেক দেশেই বা অনেক পরিস্থিতিতে অনানুষ্ঠানিক স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক উদোগ আন্দোলন পরিচালনা করে থাকে, যা অনেক সময়েই কাঠামোবদ্ধ থাকে না, থাকে না স্বীকৃত নেতৃত্ব। সেই অর্থে সিভিল সোসাইটির অভিপ্রকাশে লক্ষ করা যায় তারল্য এবং নমনীয়তা। এই অনানুষ্ঠানিকতার চরম প্রকাশ হচ্ছেÑ যখন একজন ব্যক্তির নৈতিক অবস্থান নিয়ে কোনো অন্যায় বা বৈষম্যের প্রতিবাদ করে।

সিভিল সোসাইটি কারা তা নির্ধারণের জন্য অনেকে এর কিছু বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরেন, যেমন: ১. সে রাষ্ট্র বা সরকারের অংশ হতে পারবে না, সরকারের কাছ থেকে সহায়তা নিতে পারবে না; ২. সিভিল সোসাইটি কোনো দলীয় রাজনীতির সাথে যুক্ত হতে পারবে না। এটার অর্থ এই নয় যে, সিভিল সোসাইটির কোনো রাজনৈতিক চিন্তা বা মূল্যবোধ থাকবে না; ৩. সিভিল সোসাইটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট ও স্বচ্ছ হতে হবে।

সাধারণভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে সিভিল সোসাইটির তিনটি মৌলিক ও নূন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো: রাষ্ট্র বহির্ভূত সংগঠন, রাজনৈতিক দলের বাইরে অবস্থান ও ঘোষিত কর্মসূচির পক্ষে প্রকাশ্য ও স্বচ্ছ কর্মকাণ্ড পরিচালনা।

একটি রাষ্ট্রে সিভিল সোসাইটি কেন থাকতে হয়
একটি সংঘবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন (ঝবঢ়ধৎধঃরড়হ ড়ভ ঢ়ড়বিৎং) থাকে। আমি যে কথাটা সবসময় বলে থাকি, ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য হলো কুক্ষিগত হওয়া এবং এটার অপব্যবহার করা। আমরা দেখি, সামন্তবাদী যুগে রাজাদের হাতে আইন, শাসন ও বিচারের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। সে সময় ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়েছে এবং সামন্তবাদী প্রভুরা সাধারণ মানুষকে কৃপার পাত্রে পরিণত করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ‘ক্ষমতার বিভাজন’ নীতিমালার উদ্ভব ঘটেছে। এটার উদ্দেশ্য হলোÑ যারা ক্ষমতায় যায় তারা যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না করে এবং মানুষের অধিকার হরণ না করতে পারে তা রোধ করা। এজন্য সংবিধানের অধীনে কতগুলো প্রতিষ্ঠান এবং কতগুলো বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো হয়। এগুলোর উদ্দেশ্য হলোÑ যারা নির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করে তাদের ক্ষমতার যাতে অপব্যবহার না হয় এবং ক্ষমতাবানদের স্বার্থে যাতে ক্ষমতার ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করা। ঃড় পযবপশ ড়হ ঃযব বীপবংংবং ড়ভ বীবপঁঃরাব ঢ়ড়বিৎং। আমরা জানি, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সাংবিধানিক ও বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়াও কতগুলো অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান (ঘড়হ-ংঃধঃব ধপঃড়ৎ ) থাকে, যারমধ্যে সিভিল সোসাইটি ও রাজনৈতিক দল অন্যতম। ক্ষমতার বিভাজন নিশ্চিত করার জন্য তারা ভড়ঁৎঃয নৎধহপয ড়ভ মড়াবৎহসবহঃ হিসেবে কাজ করে। তারাও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা চেক (পযবপশ) ও নজরদারিত্ব করে। শুধু তাই নয়, তারা শুধু নির্বাহী বিভাগের ওপর নজরদারিত্ব নয়, রাষ্ট্রের অন্য সব প্রতিষ্ঠান ও বিভাগের ওপর নজরদারিত্ব করাও সিভিল সোসাইটির দায়িত্ব। তাই সিভিল সোসাইটির ভূমিকা অপরিসীম। যেখানে সিভিল সোসাইটি কার্যকর নয়, সেখানে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র অনেকাংশে অকার্যকর। সেখানে শুধু নির্বাহী বিভাগ নয়, অন্যান্য বিভাগগুলোও অকার্যকর হয়।


সিভিল সোসাইটির কাজ
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী ‘সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি’ বা ‘সিভিল সোসাইটি’র প্রয়োজনীয়তা একান্তই আবশ্যক। তাদের কাজগুলো হলো:
১. সরকারকে রাষ্ট্রের রক্ষক হিসেবে পরিচালিত করবেন বা করতে বাধ্য করবেন।
২. সাধারণ জনগণের (সিভিলদের) স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।
৩. জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি হয়ে সরকারকে জনগণের কল্যাণ-চিন্তা করতে প্রণোদিত ও প্ররোচিত করবেন।
৪. সরকার এবং জনগণের মধ্যে বা রাষ্ট্র এবং জনগণের মধ্যে একটি ভ্রাতৃত্বের সেতু-বন্ধন হিসেবে কাজ করবেন এ ‘সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি’ বা ‘সিভিল সোসাইটি’।
৫. তারা সরকারের স্বেচ্ছাচারী হওয়া যেমন প্রতিরোধ করবেন, তেমনি জনগণকেও দেশের আইন-শৃঙ্খলা সুরক্ষা ও দেশের উন্নয়ন-সমৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেবেন।
৬. ‘সিভিল সোসাইটি’ তাঁদের ইতিবাচক ভূমিকার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে জনগণের বন্ধুতে পরিণত করতে পারবেন। সরকারকেও জনগণের শাসক না হয়ে সেবকে পরিণত করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি: বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলো মধ্যে তিনটি ধারা লক্ষ করা যায়, যথা: ১. যারা তৃণমূল পর্যায়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ, ক্ষুদ্রঋণ দান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য-সহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমুখী উদ্যোগ পরিচালনা করে (যেমন, ব্র্যাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংক); ২. যারা মূলত গবেষণা ও নীতি পর্যালোচনা করে (সিপিডি, উন্নয়ন সমুন্বয়, পিআরআই); ৩. যারা অ্যাডভোকেসি করে (টিআইবি, বাপা, আইন ও সালিশ কেন্দ্র)। অর্থাৎ দুর্নীতিম বঞ্চনা ও অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে এরা জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সোচ্চার থাকে এবং প্রতিরোধ সৃষ্টিতে সক্রিয় থাকে।

বাংলাদেশে কতগুলো সিভিল সোসাইটি সংগঠন রয়েছে তার কোনো হিসাব বের করা হয়নি। কোনো কোনো গবেষক বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নিবন্ধিত বেসকারি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির আয়তন নির্ণয় করার চেষ্টা করেছেন, যা অত্যন্ত সংকীর্ণ। আমি মনে করি, একটি পূর্ণাঙ্গ শুমারি ছাড়া এর সংখ্যা নিরুপণ করা সম্ভব নয়।

বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটির সবচেয়ে দৃশ্যমান ও প্রভাবশালী অংশটি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসনের জন্য সচেষ্ট, রাষ্ট্রীয় নীতি-পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক করেন, মানবাধিকার রক্ষায় স্বোচ্চার থাকেন। এরা মূলত উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিকামী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান।

জাতির/বাংলাদেশের ক্রান্তিলগ্নে সিভিল সোসাইটির ভূমিকা: ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৫৪-এর নির্বাচন, ৫৮-এ পর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬৬-র শিক্ষা আন্দোলন, ৬ দফা ও ১১ দফার জন্য সংগ্রাম এবং ৬৯-র গণঅভ্যুত্থান Ñ বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধিকার ও পরবর্তীতে স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক বুদ্ধিজীবী চিন্তা-ভাবনা-বিশ্লেষণ দিয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনকে পুষ্ট করেছেন। তারা মানুষকে সংগঠিত করেছেন, স্বীকার করেছেন নির্যাতন, হয়েছেন বৈষম্যের মুখোমুখি এবং এমনকি জীবনও দিয়েছেন।

স্বাধীনতা সংগ্রামে সিভিল সোসাইটির অনেকেই অস্ত্র হাতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পাশে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ করেছেন, বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন। স্বাধীনতার পর সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিরা শরণার্থী পুরর্বাসন ও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশের পুনর্গঠনে যুক্ত হন। এই প্রবণতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো ব্র্যাক, যা আজ বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও। অপর উদাহরণ হলো ‘গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’। গ্রামীণ ব্যাংক-সহ এই ধরনের অনেক সিভিল সোসাইটি সংগঠন দেশগঠনে বিগত সময়গুলোতে আত্মনিয়োগ করে।

স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তিকে একতাবদ্ধ করতে ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে ৩১ জন বুদ্ধিজীবী যে যুক্ত বিবৃতি দিয়েছিলেন তৎকালে তা সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রেখেছিল। পরবর্তীতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১৯৯০ সালে যে তিন জোটের যুক্ত ঘোষণা আসে তার রূপরেখাটিও কিন্তু সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধিদের দ্বারা তৈরি করা, যেখানে প্রয়াত ব্যারিস্টার ইশতিয়াক আহমেদের ভূমিকা অন্যতম।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ১৯৯২ সালে যে গণআদালত গঠন হয়েছিল তার প্রতিটি সদস্যই ছিলেন সিভিল সোসাইটির অংশ। এছাড়া মানুষের দুর্দশা লাঘবে, তথ্য অধিকার আইন পাশ, দুর্নীতি দমন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশন গঠনের আন্দোলন, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী উদ্যোগ এবং তেল-গ্যাস রক্ষার আন্দোলন-সহ আরও নানা ক্ষেত্রে সিভিল সোসাইটির ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।

বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটির বিদ্যমান অবস্থা
বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি আজ অনেকটাই বিভক্ত। রাজনৈতিক বিশ্বাস আর দেনা-পাওনার ভিত্তিতেই এ বিভাজন, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। অথচ সিভিল সোসাইটি যদি নিরপেক্ষভাবে কোনো বিশেষ মত বা দলের সমর্থক না হয়ে কাজ করতে পারতো, তাহলে অতীতের বিভিন্ন সময়ের মত আজও তা দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতো।

বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি: কতিপয় বির্তকের জায়গা
১. কর্মপরিধি: অনেকেই অভিযোগ করেন এরা প্রায় ‘সব বিষয়ে কথা বলে। এর উত্তরে বলা যায়, যেহেতু সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর তিনটি ধারা প্রায় সব বিষয়ে কাজ করেন, তাই সিভিল সোসাইটিকে সব বিষয়েই কথা বলতে হয়, তবে সে মন্তব্যগুলো অবশ্যই তথ্য-নির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে।
আমি জানি, এ প্রশ্ন অনেকেই করেন যে, সিভিল সোসাইটি প্রায় ‘সব বিষয়ে কথা বলে’। এর উত্তরে বলা যায়, যেহেতু সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর তিনটি ধারা প্রায় সব উন্নয়নমূলক কাজে যুক্ত আছেন, তাই সিভিল সোসাইটিকে প্রায় সব বিষয়েই কথা বলতে হয়। তবে আমি মনে করি, সে মন্তব্যগুলো অবশ্যই তথ্য-নির্ভর ও বস্তুনিষ্ঠ হওয়া উচিত।

২. রাজনীতি: সিভিল সোসাইটির কিছু প্রতিনিধি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সামাজিকভাবে সচেতন ও সক্রিয় ব্যক্তির জন্য দেশের আর দশজন নাগরিকের মতো রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের ইচ্ছা থাকা অযৌক্তিক নয়। অনেকে মনে করেন, রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে হয়তো আরও বড় অবদান রাখা যাবে, যেমনটা আমরা ভারতের আম-আদমী পার্টির ক্ষেত্রে দেখেছি। তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে ক্ষমতায় গিয়েছিল। তবে সিভিল সোসাইটিকে নিরপেক্ষ থাকা জরুরি বলে আমি মনে করি।
ড. বদিউল আলম মজুমদার: অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু আমি মনে করি, সামাজিকভাবে সচেতন ও সক্রিয় ব্যক্তির জন্য দেশের আর দশজন নাগরিকের মতো রাজনৈতিক ভূমিকা পালনের ইচ্ছা থাকা অযৌক্তিক নয়। অনেকে মনে করেন, রাজনীতির মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে হয়তো আরও বড় অবদান রাখা যাবে। যেমন, ভারতে আম-আদমী পার্টি প্রথমে সিভিল সোসাইটির অংশ অংশ হয়ে তথ্য অধিকার আইন ও লোকপাল বিল নিয়ে আন্দোলন করেছে, পরে তারা রাজনৈতিক দল গঠন করে দিল্লিতে ক্ষমতাসীন হয়েছে। তবে সিভিল সোসাইটিকে নিরপেক্ষ থাকা জরুরি বলেই আমি মনে করি।

৩. বিরাজনীতিকিকরণ: বাংলাদেশের সিভিল সোসাইটি বিরাজনীতিকরণের অপচেষ্টায় লিপ্ত বলে অনেকে অভিযোগ করেন। আমি মনে করি, বিরাজনীতিকরণের জন্য দায়ী দুর্বল রাষ্ট্রীয় অঙ্গসমূহ, অনুন্নত রাজনৈতিক দল/প্রতিষ্ঠান এবং অনুপযুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি। এসব পরিস্থিতিতে অরাজনৈতিক শক্তি বা ভিন্ন দেশীয় শক্তির জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়। তাই ঐহিতাসিক বিভিন্ন ঘটনা থেকে দেখা যায়, বিরাজনীতিকরণের উৎস সিভিল সোসাইটি নয়, ববং রাজনৈতিক সমাজে নিহিত। বাংলাদেশে যে সহিংতা রাজনীতি বর্তমানে তা বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহ যোগায় বলে অনেকে মনে করেন।
যারা এই অভিযোগ করে, আমার ধারণা তারা সিভিল সোসাইটির গুরুত্ব অনুধাবন করে না এবং সিভিল সোসাইটি কী কাজ করার কথা সে সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। যেটা আমি বারবার বলছি যে, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সোসাইটি থাকতেই হবে, যারা নাগরিকের জায়গা থেকে নির্বাহী বিভাগ-সহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয়ে নজরদারিত্ব করবেন এবং মানুষের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন। তাই রাজনীতি-সহ বিভিন্ন বিষয়ে সিভিল সোসাইটির বক্তব্য থাকবেÑএটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের সমাজে একদল রাজনীতিবিদ তৈরি হয়েছে, যারা মনে করেন, রাজনৈতিক বিষয়ে কথা বলতে হলে রাজনীতি করতে হবে। তারা মনে করেন, রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র তাদেরই। আমি মনে করি, এধরনের বক্তব্য ও ধ্যান-ধারণা তাদের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা ও তাদের সীমাবদ্ধ চিন্তারই প্রতিফলন। তাই দেখা যায়, ক্ষমতাসীনরা সিভিল সোসাইটির কার্যক্রমকে সীমিত রাখার জন্য বিভিন্ন চাপ প্রয়োগ করে, নতুন নতুন নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ণ করে এবং অর্থ ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে বিধি-নিষেধ আরোপ করে। রাজনীতিবিদদের যেন কোনো প্রতিপক্ষ না থাকে সেজন্য ইতিমধ্যে নানা রকম ফায়দা ও সুযোগ দিয়ে নাগরিক সমাজকে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে। সিভিল সোসাইটিকে চাপে রাখার জন্যই মূলত রাজনীতিবিদরা সিভিল সোসাইটির বিরুদ্ধে বিরাজনীতিকিরণ করার অভিযোগ তোলেন।

আমি মনে করি, বিরাজনীতিকরণের জন্য সিভিল সোসাইটি দায়ী নয়, বরং দুর্বল রাষ্ট্রীয় অঙ্গসমূহ, অনুন্নত রাজনৈতিক দল/প্রতিষ্ঠান এবং অনুপযুক্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ইত্যাদিই দায়ী। এসব পরিস্থিতিতে অরাজনৈতিক শক্তি বা ভিন্ন দেশীয় শক্তির জন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ করে দেয়। তাই ঐতিহাসিক বিভিন্ন ঘটনা থেকে দেখা যায়, বিরাজনীতিকরণের উৎস সিভিল সোসাইটি নয়, ববং রাজনৈতিক সমাজে নিহিত। বাংলাদেশে যে সহিংস রাজনীতি বর্তমানে তা বিরাজনীতিকরণকে উৎসাহ যোগাচ্ছে বলে আমি মনে করি।

৪. বৈধতা ও প্রতিনিধিত্বশীলতা: অনেকে সিভিল সোসাইটির কাজের বৈধতা ও প্রতিনিধিত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। কিন্তু তারা কি জানেন না যে, সিভিল সোসাইটির প্রায় প্রত্যেকটি সংগঠনই এনজিও ব্যুরো বা সরকারের অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং তাদের কর্মপরিকল্পনা ও অর্থায়নের উৎস সম্বন্ধে তথ্য দিয়ে ও অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম চালায়। তাই যারা প্রশ্ন তোলেন তা নিতান্তই অজ্ঞনতাবশত অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
হ্যাঁ, সম্প্রতি সরকারের শীর্ষ পদ থেকেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। কিন্তু এসব অভিযোগ আমাকে অবাক করে। তারা কি জানেন না যে, সিভিল সোসাইটির প্রায় প্রত্যেকটি সংগঠনই এনজিও ব্যুরো বা সরকারের অন্যান্য অঙ্গ দ্বারা নিবন্ধিত, নিয়ন্ত্রিত এবং তাদের কর্মপরিকল্পনা ও অর্থায়নের উৎস সম্বন্ধে সরকারকে তথ্য দিয়ে ও অনুমতি নিয়ে কার্যক্রম চালায়। তাই যারা প্রশ্ন তোলেন তা নিতান্তই অজ্ঞানতাবশত অথবা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটির তিনটি দুর্বলতা/চ্যালেঞ্জ
১. সিভিল সোসাইটির সামনে মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের প্রেক্ষিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অবস্থানকে সংহত করা।
২. সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর একটি বড় অংশে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ক্রটি রয়েছে। এক্ষেত্রে স্ব-প্রণোদিত হয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
৩. সিভিল সোসাইটির অনেক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। তাই নেতৃত্বের উত্তরাধিকার সৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আমাদের দেশে সিভিল সোসাইটি তার ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারছে কি
সাধারণত সিভিল সোসাইটি পরিচালিত হয় সমাজের অভিজাত শ্রেণি (ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিক্ষক) দ্বারা। তারাই হলেন সিভিল সোসাইটির মেরুদণ্ড। এই সিভিল সোসাইটি আমাদের স্বাধীনতার আগ থেকেই মানুষের অধিকার রক্ষায় বিভিন্নভাবে ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতা অর্জনেও আমাদের সিভিল সোসাইটির বিরাট ভূমিকা ছিল। স্বাধীনতার পরও আমাদের সিভিল সোসাইটি বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক শক্তিই এখানে মূল প্রভাবক শক্তি হয়ে উঠে এবং সিভিল সোসাইটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তবুও নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত সিভিল সোসাইটি মোটামুটি একটা ভূমিকা পালন করে যেতে থাকে। তখন সিভিল সোসাইটির মূল চালিকাশক্তি ছিল পেশাজীবীরা। কিন্তু সত্তরের দশকের পর থেকে আমাদের দেশে সিভিল সোসাইটির ধরনে একটা বড় পরিবর্তন দেখা যায়। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা তথা এনজিওগুলো সিভিল সোসাইটির অংশ হয়। এনজিওরা প্রথমে বাংলাদেশের পুনর্বাসন ও মানুষের অধিকার রক্ষা সংক্রান্ত কাজে যুক্ত ছিল। যেমন, ব্র্যাক ও প্রশিকা। পরবর্তীতে এইসব এনজিওগুলোর কাজের ধরনে পরিবর্তন আসে। যেহেতু আমাদের সরকারের অবকাঠামো, জনবল ও দুর্নীতির দিক থেকে সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তাই এনজিওগুলো সরকারের কাজে (সার্ভিস ডেলিভারি) যুক্ত হতে থাকে। অর্থাৎ ক্রমান্বয়ে আমাদের এনজিওগুলো হয়ে পড়ে সরকারের কন্ট্রাক্টর। তাদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে সার্ভিস ডেলিভারি ও ক্ষুদ্রঋণ দেওয়ার মধ্যে। কিছু কিছু এনজিও তাদের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ে অল্পকিছু অ্যাডভোকেসি করেছে। এছাড়া আমাদের এনজিওগুলো স্বল্প খরচে পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সরকারের পাশাপাশি এনজিওগুলোর ভূমিকার কারণেই বাংলাদেশ দারিদ্র্য দূরীকরণে ও মানুষের জীবন-মান উন্নয়নে ইর্ষণীয় সাফল্য দেখিয়েছে।

কিন্তু যেটা হয় নাই সেটা হলো– আমাদের এখানে ‘অ্যাডভোকেসি এনজিও’ গড়ে উঠেনি। অ্যাডভোকেসি এনজিও’র মূল উদ্দেশ্য হলো সরকারকে দায়বদ্ধ করা, মানুষকে সংগঠিত করা, মানুষের মধ্যে অধিকারবোধ সৃষ্টি করা এবং মানুষ যাতে আরও অতিরিক্ত ও মানসম্মত সেবা পায় তা নিশ্চিত করা। বর্তমানে সারাদেশে এধরনের সংগঠনের সংখ্যা হাতেগোনা। যেমন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট ও টিআইবি। কিন্তু তারা দিন দিন সরকারের বিরাগভাজন হয়েছে। এই যে একটা শূন্যস্থান…। তাছাড়া বিভিন্ন ফায়দা দেওয়ার মাধ্যমে সিভিল সোসাইটির যে চালিকাশক্তি (পেশাজীবী) তাকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, এটাকে দলীয় অনুগত বানিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই সিভিল সোসাইটি অনেকটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সিভিল সোসাইটি এনজিও’র মধ্যে ঢুকে পড়েছে। অথচ আমাদের এনজিওগুলোর বেশিরভাগই সার্ভিস ডেলিভারি, ক্ষুদ্রঋণ ও কিছু সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কাজ করে থাকে। অ্যাডভোকেসি এনজিও’র সংখ্যা নগন্য। যারফলে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, নির্বাহী বিভাগকে দায়বদ্ধ করা এসব কাজও সীমিত হয়ে পড়েছে।

সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর চ্যালেঞ্জগুলো কী
অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তারমধ্যে মোটাদাগে তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা আমি বলতে চাই: ১. মূল চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সরকারের কর্তৃত্ববাদী মনোভাবের প্রেক্ষিতে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অবস্থানকে সংহত করা; ২. সিভিল সোসাইটি সংগঠনগুলোর একটি বড় অংশে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ক্রটি রয়েছে। এক্ষেত্রে স্ব-প্রণোদিত হয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করা জরুরি; ৩. সিভিল সোসাইটির অনেক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বের পরিবর্তন লক্ষ করা যায় না। তাই নেতৃত্বের উত্তরাধিকার সৃষ্টি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সিভিল সোসাইটির সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর টানাপোড়েন
হ্যাঁ, গত দুই দশকে রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটি ক্রমান্বয়ে প্রতিযোগিতামূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার বাইরে থাকলে সর্বদাই অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সিভিল সোসাইটিকে পাশে চায়। আবার সেই রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় গেলে সিভিল সোসাইটিকে প্রতিপক্ষ মনে করে। সংসদে কার্যকর বিরোধী দল না থাকলে সিভিল সোসাইটির যে কোনো বক্তব্যকে সরকার সমালোচনার চোখে দেখে। যেমন, বিএনপির আমলে আমাদের (সুজন) বলা হয় আমরা আওয়ালী লীগের লোক, আবার আওয়ামী লীগের আমলে আমাদের বলা হয় আমরা বিএনপির লোক। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো সিভিল সোসাইটির ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মাধ্যমে নিজেরাই জনগণের সামনে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সিভিল সোসাইটির সাথে সরকারের দ্বন্দ্ব রাষ্ট্রকে এগিয়ে দেয় না, বরং পিছিয়ে দেয়। তাই গণতন্ত্র ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির মধ্যে উদার ও অংশগ্রহণমূলক নীতি-সংলাপ ও কার্যক্রম অব্যাহত রাখা জরুরি।

বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আমি আগেই বলেছি, রাজনৈতিক বিশ্বাস ও দেনা-পাওনার ভিত্তিতে আমাদের সিভিল সোসাইটি আজ বহুধা বিভক্ত। তাছাড়া সিভিল সোসাইটি হিসেবে এনজিওদের ভূমিকা পালনের ক্ষেত্র অনেকটাই সঙ্কুচিত। এর কারণ হলো– বেশিরভাগ এনজিও-ই সরকারের হয়ে সার্ভিস ডেলিভারি দেন, যা এনজিওদের সিভিল সোসাইটির ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে একটি বাধা। আমি মনে করি, ভবিষ্যতে এনজিওদের ভূমিকা ভিন্ন হওয়া উচিৎ। সরকারি সেবাগুলো সরকারকেই দিতে হবে। এনজিওদের কাজ হবে মানুষকে সংগঠিত করা, সচেতন করা, অধিকার পাওয়ার জন্য মানুষকে লড়াকু ভূমিকায় নিয়ে যাওয়া, যাতে সরকার জনগণকে আরও অধিক এবং উন্নতমানের সেবা দেয়।

এখনও পর্যন্ত এনজিওগুলোর মধ্যে সেই ভূমিকার বড় রূপান্তর না দেখা গেলেও কিছু কিছু শুরু হয়েছে। যেমন, আমরা অনেকগুলো নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করেছি, যেগুলো দাতাগোষ্ঠীর অর্থ-কড়ি দ্বারা পরিচালিত হয় না এবং এগুলো সার্ভিস ডেলিভারিমূলক নয়। যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো– একক এবং সম্মিলিত উদ্যোগে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যেমন, সুজন-এর নাম আমরা বলতে পারি। এটি কোনো নিবন্ধিত ও দাতানির্ভর সংগঠন নয়। এতে শহর থেকে গ্রাম সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ যুক্ত রয়েছেন, যারা নিজেদের এবং সমাজের মানুষের ইতিবাচক পরিবর্তন চান। তারা চান, রাষ্ট্র ভাল চলুক, সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করুক। ইতিমধ্যে সুজন-এর উদ্যোগে অনেকগুলো সফলতাও অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। সুজন-এর মত আরও আরেকটি নেটওয়ার্ক হলো ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’। এটা অনেকগুলো সংগঠন ও মানুষকে সংগঠিত করে নারী ও কন্যাশিশুদের অধিকার আদায়ে অ্যাডভোকেসি করে যাচ্ছে। এ ধরনের আরেকটি নেটওয়ার্ক হলো ‘বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক’। এগুলো অনেকটাই এনজিও কাঠামোর বাইরে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। আমি আশা করি, অন্যেরা এই ধরনের উদ্যোগ ও সংগঠন গড়ে তুলবে, যেগুলো সিভিল সোসাইটির যে দায়িত্ব তা পালন করবে।

প্রকাশ: ১০ জুন ২০১৯

Leave a Reply

Your email address will not be published.