ক্ষমতার ভারসাম্য ও জবাবদিহিতার জন্য প্রয়োজন ‘দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ’

ভূমিকা
গণতন্ত্রের মূল কথা হলো ‘নিজেদের দ্বারা নির্বাচিত ও গঠিত সরকারের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে শাসনব্যবস্থা পরিচালিত’ হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার হলেই প্রত্যাশিত গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয় না। কারণ গণতন্ত্রের মূল উদ্দেশ্যই হলো কোনো এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার শাসনের পরিবর্তে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী ও জনকল্যাণে পরিচালিত জবাবদিহিমূলক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হবে।

আমরা জানি যে, একটি সংঘবদ্ধ ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন, বিচার ও শাসন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন (Separation of powers) থাকে। আমরা এও জানি, ক্ষমতার বৈশিষ্ট্য হলো কুক্ষিগত হওয়া এবং এটার অপব্যবহার করা। আমরা দেখি, সামন্তবাদী যুগে রাজাদের হাতে আইন, শাসন ও বিচারের সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত ছিল। সে সময় ক্ষমতার যথেচ্ছ অপব্যবহার হয়েছে এবং সামন্তবাদী প্রভূরা সাধারণ মানুষকে কৃপার পাত্রে পরিণত করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্যই আধুনিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে ‘ক্ষমতার বিভাজন’ নীতিমালার উদ্ভব ঘটেছে। এর উদ্দেশ্য হলো– যারা ক্ষমতায় যায় তারা যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না করে এবং মানুষের অধিকার হরণ না করতে পারে তা রোধ করা। এজন্য সংবিধানের অধীনে কতগুলো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে এবং বিশে^র বিভিন্ন দেশে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো দাঁড় করানো হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো– যারা নির্বাহী ক্ষমতা ভোগ করেন তারা যাতে ক্ষমতার অপব্যবহার না করতে পারেন, ক্ষমতাবানদের স্বার্থে যাতে ক্ষমতার ব্যবহার না হয় তা নিশ্চিত করা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় যাতে জবাবদিহিতা ও ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

কোনো ধরনের ঐকমত্য ছাড়াই বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রেক্ষাপটে জাতীয় নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না হওয়া, একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতির কারণে আকাক্সক্ষা অনুযায়ী সংসদ কার্যকর না থাকা, সংসদ সংসদে দ্রুত আইন পাশ এবং প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত ক্ষমতা ব্যবহার ও দলীয় স্বার্থে এই ক্ষমতার ব্যবহারের প্রেক্ষাপটে দেশে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বাংলাদেশের বিদ্যমান সংসদীয় কাঠামো
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর গৃহীত ১৯৭২-এর সংবিধান অনুসারে বাংলাদেশে এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। এই সংবিধানের আওতায় ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে সরকার পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটে এবং পরবর্তীতে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারপদ্ধতির আওতায়। ১৯৯১ সালে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তিত হয়। এরপর থেকে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনই সংসদীয় পদ্ধতির সরকারব্যবস্থার অধীনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সর্বশেষ ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা। সহজ সংখ্যাধিক্য পদ্ধতিতে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা থেকে ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ বা সহজ সংখ্যাধিক্য পদ্ধতিতে জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত ৩০০ সদস্যের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত। এছাড়াও সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে (৩০০ আসনে দলগুলোর প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে) বর্তমানে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসন রয়েছে।

জাতীয় সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। নির্বাচনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনের দিন থেকে এই মেয়াদ গণনা শুরু হয়। বাংলাদেশের সংবিধানের ১২৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী , সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে। যদিও পূর্ববর্তী সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর এর অধিবেশন বসে। তবে যে কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে ।

কেমন ছিল ১১টি সংসদ
বিগত ৪৮ বছরে বাংলাদেশ ১১টি জাতীয় সংসদ পেয়েছে। দেশে গণতন্ত্রের দ্বিতীয় যাত্রা শুরু হয় নব্বইয়ে স্বৈরাচারী শাসক এরশাদের বিদায়ের পর, ১৯৯১ সালে। কিন্তু পরবর্তী কোনো সংসদে সরকারি ও বিরোধী দল পুরো মেয়াদে একসঙ্গে কাজ করেছে, এ রকম উদাহরণ নেই। বিশেষ করে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম সংসদে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি ও তার সহযোগী দলগুলো এবং বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী দলগুলো সংসদ বর্জনকে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের’ একমাত্র উপায় হিসেবে নিয়েছিল। আর সেই সুযোগে সরকার নিজের ইচ্ছেমতো সংসদ পরিচালনা করেছে, আইন তৈরি করেছে। নবম সংসদ পর্যন্ত এই ধারা অব্যাহত ছিল ।

দশম সংসদ ছিল অভিনব। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে বিএনপি-সহ দেশের ৭০ শতাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনটি বর্জন করে। এরফলে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে। একইসঙ্গে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের অংশীদার হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, ওই সংসদে প্রকৃতপক্ষে কার্যকর কোনো বিরোধী দল ছিল না। একইভাবে একাদশ জাতীয় নির্বাচন একতরফা ও নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হওয়ার কারণে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে। দশম সংসদের জাতীয় পার্টিই আবার বিরোধী দলে আসীন হয়। তাই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে বিরোধী দল কার্যকর না থাকায় জবাবদিহিতা নিশ্চিত হচ্ছে না, বিরোধী দল সরকারের কর্মকা-ের সমালোচনার ক্ষেত্রে কৌশলী ভূমিকা পালন করছে, অনেকক্ষেত্রে নীরবতা অবলম্বন করছে। অথচ আমরা জানি, সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল শুধু সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেয় না, নিজেরাও বিকল্প বা ছায়া সরকারের দায়িত্ব পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, ব্রিটেনে বিরোধী দল সরকারের প্রতিটি দপ্তরের জন্য একজন ছায়া মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সরকারের কোনো নীতি পছন্দ না হলে তারা শুধু সমালোচনা করে দায়িত্ব শেষ করেন না, বিকল্প প্রস্তাবও উত্থাপন করেন।

কেন এক-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ নয়
এক. মন্ত্রিপরিষদশাসিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারের স্তম্ভ হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ, আইন পরিষদ ও শাসন বিভাগের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। মূলত তাঁকে কেন্দ্র করেই প্রজাতন্ত্রের সকল শাসন ও প্রশাসন পরিচালিত হয়। অর্থাৎ বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী ‘প্রধানমন্ত্রী’ পদটি রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যত কোনো জবাবদিহি নেই। তবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে পারেন সংসদ সদস্যরা। বাংলাদেশের সংবিধানে এ ধরনের বিধানও রয়েছে। কিন্তু আমরা জানি, বাংলাদেশে সাধারণত সরকারপ্রধান একইসঙ্গে দলীয় প্রধান ও সংসদীয় দলের প্রধান হয়ে থাকেন। সে কারণে প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব যেকোনো মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদে গ্রহণীয় করার জন্য দলীয় সংসদ সদস্যদের ওপর চাপিয়ে দিতে সক্ষম। তাছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দেয়া হয়েছে। এই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদিÑ (ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’ তাই একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য কিংবা জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা হয় না ।

দুই. রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান। সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি একটি অলঙ্কারিক পদ মাত্র। কেবল প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ব্যতিত অন্যান্য সকল বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর পূর্বানোমোদন প্রয়োজন হয়। তাই বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হয় না।

তিন. এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা জনগণের নির্বাচিত সংস্থা। তাই এখানে নির্বাচন তথা দলীয় লোক ছাড়া বিভিন্ন পেশার লোকেরা প্রতিনিধি প্রেরণ করতে পারেন না এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সব শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা হয় না।

চার: বলা হয়, জনসাধারণের ভোটে নির্বাচিত বলে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় জ্ঞানী-গুণী লোকের আসর নয়। কারণ জ্ঞানী ও গুণী ব্যক্তিরা নির্বাচনের ঝামেলা ও ঝুঁকি গ্রহণ করতে উৎসাহ বোধ করেন না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমনটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে শপথ নেয়া সংসদ সদস্যদের ১৮২ জনই (৬১ দশমিক ৭ শতাংশ) পেশায় ব্যবসায়ী। একইভাবে দশম জাতীয় সংসদের ৩৫০ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে অধিকাংশই (১৭৫ জন বা ৫০%) ব্যবসায়ী । অর্থাৎ ধনাঢ্য ব্যক্তিদের করায়ত্ত হয়েছে বাংলাদেশের সংসদে, যার ফলে সবার প্রতিনিধিত্ব, সবার মতামত ও স্বার্থ নিশ্চিত হচ্ছে না।

পাঁচ. এককক্ষবিশিষ্ট সংসদ স্বৈরাচারী ও বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। আমরা দেখেছি বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি সংসদে একটি মাত্র দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। আর সংসদের উচ্চকক্ষ না থাকায় এই সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে কোনো ধরনের ঐকমত্য ছাড়াই জনস্বার্থবিরোধী আইন পাশ হয়েছে, যা পরবর্তীতে ব্যাপক রাজনৈতিক সংকট তৈরি করেছে। উদাহরণস্বরূপ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের কথা বলা যেতে পারে। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করে সে সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অধীনে ১৪ দলীয় জোট, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যুগপৎ আন্দোলন পরিচালনা করে। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানে ‘নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা’ যুক্ত করা হয়। এরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনেকটাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম (১৯৯৬), অষ্টম (২০০১) ও নবম (২০০৮) জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কিন্তু ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল সংক্রান্ত সর্বোচ্চ আদালতের একটি সংক্ষিপ্ত আদেশকে ভিত্তি করে Ñ পূর্ণ রায় বের হওয়ার আগেই Ñ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ৩০ জুন ২০১১ সালে সংসদে দলীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাশ করে। উল্লেখ্য, সে সময় সংবিধান সংশোধনের জন্য গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী প্রস্তাব আনা হলেও কমিটির সর্বসম্মত প্রাথমিক সুপারিশ ছিল একটি মীমাংসিত বিষয় হিসেবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে বহাল রাখা (প্রথম আলো, ২৮ অক্টোবর ২০১৩)।

ছয়. এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা সাধারণত আবেগ ও দলীয় মনোভাবে দ্বারা পরিচালিত হয়ে জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দেয়। তাছাড়া এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় দ্রুত ও নিবর্তনমূলক আইন পাশ হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী একাদশ সংসদের পাঁচটি অধিবেশনে আইন প্রণয়ন কার্যক্রমে ৯ শতাংশ সময় ব্যয় হয়েছে। ভারতের ১৭তম লোকসভায় এই হার ছিল ৪৫ শতাংশ। বাংলাদেশে উত্থাপনসহ প্রতিটি বিল পাস করতে গড়ে প্রায় ৩২ মিনিট সময় ব্যয় হয়েছে। অপরদিকে ২০১৯ সালে ভারতের লোকসভায় প্রতিটি বিল পাস হতে সময় লাগে গড়ে ১৮৬ মিনিট ।

সাত. বর্তমানে বাংলাদেশের নির্বাচনে ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ (ঋচঞচ ) বা সহজ সংখ্যাধিক্য পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতির অনেকগুলো সীমাবদ্ধতা রয়েছে। একটা সীমাবদ্ধতা হলো যেহেতু কোনো একটি সংসদীয় আসন থেকে সংসদ সদস্যদেরকে নির্বাচিত হয়ে আসতে হয় সেজন্য তাদেরকে অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনতে হয় এবং পেশিশক্তি ও অর্থ খাটিয়ে নির্বাচিত হতে হয়। তাই অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাবে আমাদের সংসদগুলোতে ব্যবসায়ীদের আধিক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে। এরফলে সাধারণ মানুষের ভোটাধিকার থাকলেও, সংসদে তাদের প্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ নেই। তাছাড়া বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় দ্বি-দলীয় রাজনীতির বাইরে ক্ষুদ্র দলগুলোর যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও তারা নির্বাচিত হয়ে আসতে পারেন না। তাই সংসদে সকল দল ও শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো এবং ‘আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক’ (চৎড়ঢ়ড়ৎঃরড়হধষ ৎবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ ) নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন করা দরকার।

কেন দরকার দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদ
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ কোনো নতুন বিষয় নয়। শুধু উন্নত দেশ নয়, অনেক উন্নয়নশীল দেশেও দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। বাংলাদেশে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদের দাবি জোরালো না হলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও বিকল্পধারা বাংলাদেশ ইত্যাদি রাজনৈতিক দল থেকে বিভিন্ন সময় এই দাবি জানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ঢাকায় বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় সম্মেনে দলটি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছিলেন। এর পেছনে তিনি যুক্তিও দিয়েছিলেন। সমাজের বিভিন্ন অংশের, বিভিন্ন গোষ্ঠীর ‘মেধাবী’ মানুষের মতামতকে জায়গা করে দেয়ার জন্য তিনি এ প্রস্তাব করেন । সিরাজুল আলম খান এবং আ স ম আবদুর রবের জাসদ ১৯৮৪ সাল থেকে দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন ।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষা অনুযায়ী দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদের উপকারিতা নি¤œরূপ:
এক. দ্বিতীয় কক্ষ প্রথম কক্ষের দ্রুততা, হঠকারিতা ও অবিবেচনামূলক আইন প্রণয়নে বাধা দিতে পারে। চ্যান্সেলর কেন্ট বলেন, ‘এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার আবেগ, খেয়াল, কুসংস্কার, দলীয় মনোভাব ও উত্তেজনার ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া ধ্বংস করতে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা সহায়তা করে।’
দুই. দ্বিতীয় কক্ষ প্রথম কক্ষের স্বৈরাচার বন্ধ করে। লর্ড ব্রাইস বলেন, ‘দ্বিতীয় কক্ষ এক কক্ষবিশিষ্ট আইন পরিষদের ঘৃণ্য, দুর্নীতিপরায়ণ ও স্বেচ্ছাচারী প্রবণতার বিরুদ্ধে প্রতিকার হিসেবে কাজ করে।’
তিন. দ্বি কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা অভিজাতশ্রেণির প্রতিনিধিত্বের পথ সুগম করে। মনোনয়নের মাধ্যমে উচ্চকক্ষে অভিজাতশ্রেণির প্রতিনিধিত্ব এক কক্ষের উগ্র মানসিকতার বিরুদ্ধে ভারসাম্য রক্ষায় সহায়তা করে।
চার. উচ্চকক্ষে বিভিন্নশ্রেণির প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা করে আইন পরিষদকে অধিকতর প্রতিনিধিত্বমূলক করা যেতে পারে।
পাঁচ. দ্বি কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকারের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। জনসংখ্যার ভিত্তিতে নি¤œ কক্ষে ও সমসংখ্যক আসনের ভিত্তিতে উচ্চকক্ষে প্রতিনিধি প্রেরণের ব্যবস্থা করে অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে ভারসাম্য স্থাপন করা যেতে পারে।
ছয়. দ্বি কক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় নি¤œ কক্ষে আইন পাশ হওয়ার পর উচ্চকক্ষে আইনটি বিবেচিত হওয়ার আগে বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মতামত দেয়ার সুযোগ পান। ফলে জনগণের সঠিক প্রতিফলন ঘটে।
সাত. উচ্চকক্ষ নি¤œ কক্ষের দায়িত্ব লাঘব করতে পারে। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উচ্চকক্ষকে ছেড়ে দিয়ে নি¤œকক্ষ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে সময় দিয়ে আলোচনা করতে পারে ।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার দাবির পেছনে তিনটি প্রধান কারণ হলো:
এক. সংসদের নিম্নকক্ষ বা রাজনৈতিক পরিষদে সকল দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা থাকলেও উচ্চকক্ষ বা বিশেষজ্ঞ পরিষদে বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ, বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধির পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নির্বাচিত, দক্ষ ও অপেক্ষাকৃত প্রবীণদের সমন্বয়ে গঠিত হতে পারে। ফলে উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষমতার ভারসাম্য বা চেক্স অ্যান্ড ব্যালেন্স কাজ করবে। উচ্চকক্ষ যেমন জনবিরোধী বা দেশের স্বার্থ বিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না, আবার তেমনি নিম্নকক্ষ কোনো অপরিপক্ক সিদ্ধান্ত নিলে উচ্চকক্ষ সেটা পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ পাবে।

দুই. পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতির পদ অনেকটাই অলঙ্কারিক। তাই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো গড়ে তোলা দরকার। প্রধানমন্ত্রী সংসদের নিম্নকক্ষ বা রাজনৈতিক পরিষদের নেতা হলে রাষ্ট্রপতি সংসদের উচ্চকক্ষ বা বিশেষজ্ঞ পরিষদের প্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারবেন।

তিন. দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামোতে একটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও অপরটি বিদ্যমান থাকে, ফলে দেশে সাংবিধানিক শূন্যতা দেখা দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যদিকে সংসদের দুটি কক্ষ থাকলে নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার বা নির্বাচনে সরকারের প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ থাকে না। আবার সংসদের দুটি কক্ষেই নির্বাচিতরা থাকায় অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা সরকার গঠিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তাই বাংলাদেশে বিরাজমান নির্বাচনকালীন জটিলতার সমাধান পেতে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো গড়ে তোলা দরকার।

কেমন হবে দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদের কাঠামো
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণœ রেখে দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো গড়ে তোলা হলে তা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে না। এর কাঠামো হতে পারে দুই ভাবে:

প্রথমত. অঞ্চলভিত্তিক জনপ্রতিনিধি নিয়ে সংসদের ‘নিম্নকক্ষ’ হবে ৩০০ সদস্যবিশিষ্ট। দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে নি¤œকক্ষ গঠিত হবে। যেমন, কোনো দল যদি তিন শতাংশ ভোট পায় তাহলে তারা সংসদে নয়টি আসন পাবে। জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস পর পূর্বের উচ্চকক্ষ ভেঙে নির্বাচনের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ৩০০ জন সদস্য নিয়ে নতুনভাবে উচ্চকক্ষ গঠন করা হবে। কারা হবেন উচ্চকক্ষের সদস্য? যেসব রাজনৈতিক দল প্রথাসিদ্ধ রাজনীতি করে সেসব দল যত ভোট পাবে, তার ওপর ভিত্তি করে তারা উচ্চকক্ষের সদস্য সংখ্যা পাবে। ধরে নেই সংসদের আসন ৩০০। এক্ষেত্রে কোনো একটি দল নৌকা বা ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন না করে তাদের নিজস্ব প্রতীক হাতি বা গাধা নিয়ে নির্বাচন করল। তারা কোনো আসনেই জিতল না। কিন্তু সর্বসাকুল্যে এক শতাংশ ভোট পেল। ৩০০ আসনের এক শতাংশ সদস্য তারা পাবে। অর্থাৎ তাদের রাজনৈতিক দলের কমপক্ষে তিনজন সদস্য উচ্চকক্ষের সদস্য হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের তিন মাস আগে নি¤œকক্ষ ভেঙে দেয়া হবে এবং নির্বাচনের সময় উচ্চকক্ষই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে ।

দ্বিতীয়ত. জাতীয় নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতের মাধ্যমে ৩০০ জন সদস্য নিয়ে নি¤œকক্ষ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নি¤œকক্ষের প্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে তাদের মনোনীত অদলীয় ২০০ জন সদস্যকে নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠন করা যেতে পারে। এই ২০০ জন সদস্য হবেন বিভিন্ন শ্রম-কর্ম-পেশার প্রতিনিধি, নিম্নকক্ষের নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসনের আনুপাতিক প্রতিনিধি, প্রবাসীদের মধ্য থেকে অন্তত দশজন প্রতিনিধি, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীতি প্রতিনিধি, বিভিন্ন প্রাদেশিক পরিষদ (গঠনের পর) প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিনিধি, নারী প্রতিনিধি ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধি। নির্বাচনের আগে নি¤œকক্ষ ভেঙ্গে দিয়ে তাদের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত নির্বাচন কমিশনের অধীনে ও তাদের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ: অন্য দেশের উদাহরণ
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়ান ফেডারেশন, ফ্রান্স, জার্মানি ও অষ্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশে দ্বি কক্ষবিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। গণতন্ত্রের সুতিকাগার হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার ভারসাম্য টিকিয়ে রাখা ও নজরদারিত্বের কাঠামোর জোরদার করার জন্য দেশটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই সিনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ (প্রতিনিধি পরিষদ) নামে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যে দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ কার্যকর, যা হাউজ অফ লর্ডস ও হাউজ অফ কমন্স নামে পরিচিত। এছাড়া রাশিয়ায় ফেডারেশন কাউন্সিল ও স্টেট ডুমা, ফ্রান্সে সিনেট ও ন্যাশনাল এসেম্বলি, জার্মানিতে ফেডারেল কাউন্সিল ও ফেডারেল ডায়েট এবং অস্ট্রেলিয়ায় সিনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ নামে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ বিদ্যমান।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, বাংলাদেশ, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা ছাড়া অন্যান্য দেশে দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ কার্যকর। বাংলাদেশের পাশর্^বর্তী দেশ ভারতে ভারতে রাজ্যসভা (কাউন্সিল অফ স্টেটস) ও লোকসভা (কাউন্সিল অফ দ্য পিপল) নামে দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারেও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ও পিপলস অ্যাসেম্বলি নামে দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। এছাড়া পাকিস্তানে সিনেট ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, আফগানিস্তানে হাউজ অফ এল্ডার্স ও হাউজ অফ দ্যা পিপল, ভুটানে ন্যাশনাল কাউন্সিল ও ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি, নেপালে ন্যশনাল অ্যাসেম্বলি ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস নামে ‘দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ’ রয়েছে।

আফ্রিকা মহাদেশের মিশর, সুদান, ইথিওপিয়া, দক্ষিণ সুদান ইত্যাদি দেশগুলোতেও দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। মিশরে মজলিসে শুরা ও মজলিসে সা’ব, সুদানে ন্যাশনাল লেজিসলেচার ও কাউন্সিল অফ স্টেটস, ইথিওপিয়ায় হাউজ অফ ফেডারেশন ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভ, দক্ষিণ সুদানে ন্যাশনাল লেজিসলেচার ও কাউন্সিল অফ স্টেটস নামে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে।

এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান, কাজখাস্তান, ওমান, মালয়েশিয়া, উজবেকিস্তান ইত্যাদি দেশে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। জাপানে হাউজ অফ কাউন্সিলর্স ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস, মালয়েশিয়ায় সিনেট ও হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস, কাজখাস্তানে সিনেট ও অ্যাসেম্বলি, ওমানে মজলিসে শুরা ও মজলিসে দৌলা, উজবেকিস্তানে সিনেট ও লেজিসলেটিভ চেম্বার নামে দ্বি কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *