আমরা জানি, ‘মানব প্রকৃতি’ বলে একটা কথা আছে, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘Human Nature’ । প্রত্যেকটি মানুষই একটি নিজস্ব প্রকৃতি পোষণ/লালন করে। কিন্তু প্রকৃতি বা চলার ধরনে মানুষে মানুষে রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য বা পার্থক্য। প্রকৃতিগত এই পার্থক্যের কারণেই মানুষের মধ্যে কেউ হয় শান্ত স্বভাবের, মিশুক কিংবা সদা হাস্যমান। আবার কেউ হয় বদমেজাজি ও ইতর প্রকৃতির।প্রকৃতির ভিন্নতার কারণে কেউ কেউ প্রত্যেকটি ঘটনাকেই তাঁর জীবনের একটি অংশ মনে করে। বাঁধা-বিপত্তি আসলে সেগুলো মাড়িয়ে তাঁর লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে যায়।
অন্যদিকে সংকীর্ণ মনের অধিকারী ব্যক্তি কিছুই পারবো না বলে আবদ্ধ ঘরের কোণে বসে থেকে জীবনটা পার করে দেয়। জীবনে ঝুঁকি নিতে ভয় পায়। কাজের চাপ একটু বেড়ে গেলে অন্যের ওপর রাগ ঝাড়ে, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হুলস্থূল কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। জীবনকে সহজভাবে নিতে না পারা এসব মানুষ বাঁধাগ্রস্ত হয় জীবনের প্রতিটি ধাপে।
মূলত, একটি সাহসী-সুন্দর প্রকৃতির অধিকারী মানুষ তাঁর নিজের জীবনকে ভালবাসে। যত বিপদই আসুক না কেন লক্ষ্য অর্জনে থাকে অটুট ও আত্মবিশ্বাসী। গতানুগতিকতার বাইরে এসে তারা শুধু নিজেকে নিয়ে নয়- ভাবে সমাজকে নিয়েও। সফলতা পদচুম্বন করে এসব কীর্তিমান মানুষদের। কঠিন অধ্যাবসায়, মানবপ্রেম তথা স্বীয় ইতিবাচক কীর্তির কারণে এসব মানুষদের জীবন হয়ে উঠে সার্থক।
প্রশ্ন আসতে পারে, এই প্রকৃতিকে কি পরিবর্তন করা যায়? হ্যাঁ, পুরোপুরি না হলেও স্বীয় প্রকৃতিকে অনেকাংশে পরিবর্তন করা যায়। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির পরিবর্তন প্রত্যাশী মন ও ইচ্ছার ওপর। এজন্য ব্যক্তিকে দাঁড়াতে হবে আপন মনের আয়নায়। নিজের সমস্যাগুলো নির্ণয় করতে হবে, নিজের সাথে নিজের একটা বোঝাপড়া গড়ে তুলতে হবে। নিজের সমস্যাগুলো প্রথমত নিজেকেই অনুধাবন করতে হবে। তা সম্ভব না হলে কাছের মানুষ কিংবা প্রিয় একজন শুভাকাক্সক্ষীর সহায়তা নেয়া যেতে পারে। মানে ব্যক্তিকে দাঁড়াতে হবে অন্যের আয়নায়। তবে যিনি অন্যের আয়না হবেন তাঁর অ্যাপ্রোচ বা বলার ধরন আন্তরিক হতে হবে। সমস্যা নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পর তা নিরসনে একটা অগ্রাধিকার তালিকা করতে হবে। এছাড়া নতুন ও ভাল কিছুকে গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে, এক্ষেত্রে মনীষীদের জীবনী পড়া যেতে পারে। অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য ভিন্ন পরিবেশে মিশতে হবে, তবে সেখানকার নেতিবাচক দিকগুলো গ্রহণ করাটা যৌক্তিক হবে না।
সর্বোপরি, স্বীয় প্রকৃতিকে পরিবর্তনের জন্য নিজের বিবেককে শাণিত করে পৌঁছতে হবে নতুন লক্ষ্যে, নতুন ঠিকানায়।
২৫ এপ্রিল ২০১৭