এসডিজি কী এবং কেন?

ভূমিকা: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) হলো– বিশ্বমানবতার সমৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত একটি কর্মপরিকল্পনা, যা বিশ্বব্যাপী শান্তি, সমৃদ্ধি ও কার্যকর অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা, এসডিজি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাবে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এবং অর্জিত হবে পরিবেশের ভারসাম্য।
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৯৩টি দেশের রাষ্ট্র/সরকার প্রধানেরা ‘ট্রান্সফরমিং আওয়ার ওয়ার্ল্ড: দ্যা ২০৩০ এজেন্ডা ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট’ শিরোনামে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুমোদন করেন। জাতিসংঘের উদ্যোগে দ্বিতীয়বারের মতো ১৫ বছরের এই পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর আগে আটটি লক্ষ্য নিয়ে ২০০১ সালে গৃহীত হয় সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা।
সম্পদের টেকসই উৎপাদন ও ব্যবহার, প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন রোধে তড়িৎ উদ্যোগ এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পৃথিবীকে সব ধরনের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করা এসডিজির অন্যতম লক্ষ্য। এসডিজির মাধ্যমে সব মানুষের সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবনের নিশ্চয়তা, অর্থনৈতিক-সামাজিক ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সমন্বয় এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠাসহ সমাজে সব ধরনের ভয়ভীতি ও বৈষম্য দূর করা হবে। এতে বলা হয়েছে, পৃথিবীর কোথাও অশান্তি নিয়ে কোনো টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না এবং টেকসই উন্নয়ন ছাড়া শান্তি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। এ লক্ষ্যে সব নাগরিক, অংশীদার ও রাষ্ট্রের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করা হবে।

এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রাসমূহ:
এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা বিস্তারিত, সুদূরপ্রসারী ও গণকেন্দ্রিক। এতে বিশ্বজনীন রূপান্তর সৃষ্টিকারী ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯টি টার্গেট অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নিম্নে এসডিজি’র লক্ষ্য ও টার্গেটগুলো উল্লেখ করা হলো:

লক্ষ্যমাত্রা ১: দারিদ্র্যের অবসান
(সব ধরনের দারিদ্র্য দূর করা)
টার্গেটসমূহ:
# বেকারত্বের মতো দিকগুলো থেকে সমাজের প্রত্যেকে যাতে সুরক্ষা পায় এবং সবাই যাতে স্বাস্থ্যসেবা পায় তা নিশ্চিত করা। এটি সামাজিক সুরক্ষা হিসেবে পরিচিত এবং বিশেষ করে হত-দরিদ্র ও সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা ও সহায়তা দিতে এটি ব্যবহার করা হয়।
# মৌলিক সেবাসমূহ, শ্রম, ভূমি, প্রযুক্তিতে স্বল্প পুঁজির লোকদের সম-সুযোগ নিশ্চিতকরণে এবং তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য তারা কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করতে যেসব সামাজিক নীতিমালা সহায়তা করে সেগুলো বাস্তবায়নে সম্পদের যথাযথ বণ্টন নিশ্চিত করা।

লক্ষ্যমাত্রা ২: ক্ষুধামুক্তি
(ক্ষুধা মুক্তি, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টির লক্ষ্য অর্জন ও টেকসই কৃষি ব্যবস্থা চালু)
টার্গেটসমূহ:
# শিশু, মা, এবং বৃদ্ধদের জন্য সামাজিক কর্মসূচির আওতা বাড়ানো এবং বছরব্যাপী নিরাপদ, পুষ্টিকর ও পর্যাপ্ত খাবার নিশ্চিত করার মাধ্যমে অপুষ্টি দূর করা।
# ক্ষুদ্র চাষীদের, বিশেষ করে নারী ও আদিবাসীদের, কৃষি উৎপাদন ও আয় বাড়ানো; প্রত্যেক অঞ্চলের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য ও নিজস্ব সম্পদের প্রতি খেয়াল রাখা।
# খরা, বন্যা ও অন্যান্য দুর্যোগের মতো সমস্যা প্রতিরোধ করা।
# বীজ, শস্য ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রাণীদের (গৃহপালিত ও বুনো) বিভিন্ন জাতের সুরক্ষা করা এবং এসব সম্পদের সুফল ন্যায্যভাবে বিতরণ করা।

লক্ষ্যমাত্রা ৩: সুস্বাস্থ্য
(স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন নিশ্চিত করা ও সব বয়সের সবার কল্যাণে কাজ করা)
টার্গেটসমূহ:
# সন্তান জন্মদানের সময় মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা।
# নবজাতক ও পাঁচ বছরের নিচের শিশুদের মৃত্যুহার প্রতিরোধ করা।
# এইচআইভি/এইডস ও হেপাটাইটিস বা পানিবাহিত রোগ প্রভৃতি মহামারী নির্মূল করা।
# ওষুধ ও অ্যালকোহলের অপব্যবহার রোধ এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে মানুষকে সচেতন করা।
# পরিবার পরিকল্পনা, যৌন শিক্ষা ও গর্ভবতী মায়েদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রদান করা।
# উচ্চমান সম্পন্ন স্বাস্থ্য সেবা, সাশ্রয়ী ও সহজপ্রাপ্য ঔষধ ও টিকার সহজপ্রাপ্যতাসহ সবার সুস্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করা।

লক্ষ্যমাত্রা ৪: মানসম্মত শিক্ষা
(সবার জন্য ন্যায্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং সকলের জন্য সব বয়সে শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করা, যা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু হবে।
# যুবক ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার আরও বেশি সুযোগ প্রদান করা যাতে করে তারা ভালো চাকরি পেতে পারে।
# নারী ও পুরুষ, প্রতিবন্ধী শিশু, আদিবাসী ও সংঘাতময় পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার সুযোগে যে কোনো প্রকারের বৈষম্যের অবসান ঘটানো।
# সবার জন্য একটি নিরাপদ ও ইতিবাচক শিক্ষার পরিবেশ প্রদানে স্কুলের সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো।
# দেশে বা বিদেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের জন্য বৃত্তির সংখ্যা বাড়ানো।
# উচ্চ-প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিশ্চিত করা।
# টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা সম্প্রসারণ করা।

লক্ষ্যমাত্রা ৫: লিঙ্গসমতা
(লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং সব নারী ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন করা)
টার্গেটসমূহ:
# যৌন পাচার ও অন্যান্য ধরনের প্রতারণাসহ নারী ও বালিকাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের সহিংসতার অবসান ঘটানো।
# নারী ও বালিকাদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন স্বাস্থ্যের হানি ঘটাতে পারে এ ধরনের সব আচরণ ও প্রথার অবসান ঘটানো।
# বাসায় নারীদের কাজের স্বীকৃতি ও মূল্যায়ন করা। রাজনীতি, অর্থনীতি ও সর্বস্তরে নারীদের মতামত প্রদান ও তাদের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ প্রদান করা।
# নারীদের যৌন ও মাতৃকালীন স্বাস্থ্যসেবার অধিকার সুরক্ষিত করা।
# লিঙ্গ-সমতা নিশ্চিতকরণে নীতিমালা ও আইন প্রণয়নে কাজ করা।

লক্ষ্যমাত্রা ৬: বিশুদ্ধ পানি ও পয়ঃব্যবস্থা
(সবার জন্য পানি ও পয়ঃব্যবস্থার প্রাপ্যতা ও তার টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# সবার নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা।
# সবার জন্য পয়োব্যবস্থা (নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশন ও উন্নত ময়লা ব্যবস্থাপনা) নিশ্চিত করা এবং স্বাস্থ্যসম্মত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তুলতে জনসচেতনতা গড়ে তোলা।
# দূষণ রোধে পানির মান নিয়মিত পরীক্ষা করা। পানিতে রাসায়নিক বা দূষণকারী পদার্থ ফেলা রোধ করা।
# পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা; এর পুনঃব্যবহারের জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা।
# কমিউনিটিগুলো যাতে তাদের পানির ব্যবস্থাপনা ও পয়ঃব্যবস্থা উন্নত করতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে সেজন্য সচেতনতা গড়ে তোলা।

লক্ষ্যমাত্রা ৭: নবায়নযোগ্য জ্বালানি
(সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক জ্বালানি নিশ্চিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# নতুন অবকাঠামো ও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সবার জন্য সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য, ও আধুনিক জ্বালানি সেবা নিশ্চিত করা।
জ্বালানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা — দ্রুততার সাথে কম জ্বালানি খরচ হয় এরূপ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।
জ্বালানির অন্যান্য উৎসের তুলনায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো
নবায়নযোগ্য ও অন্যান্য বিশুদ্ধ জ্বালানি সম্পদ বিষয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য একযোগে কাজ করা।

লক্ষ্যমাত্রা ৮: উপযুক্ত কর্ম এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
(সবার জন্য দীর্ঘমেয়াদি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল ও উপযুক্ত কাজের সুবিধা নিশ্চিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# মানুষের বিকাশকে সহায়তা করে এরূপ নিরাপদ ও সৃজনশীল কাজের সুযোগ প্রদান করা।
# অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদকে বিবেচনায় রাখা ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা।
# নারী ও পুরুষ, যুবক, ও প্রতিবন্ধী– সবার জন্য যথোপযুক্ত কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করা।
# প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে বেকার যুবকদের সংখ্যা কমানো।
# শিশু সৈনিক নিয়োগসহ সব ধরনের জবরদস্তিমূলক শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও বন্ধ করা।
# বৈশ্বিকভাবে, তরুণদের আরও বেশি কর্মসংস্থানে পদক্ষেপ নেওয়া।

লক্ষ্যমাত্রা ৯: কারখানা, উদ্ভাবন ও অবকাঠামো
(সবার জন্য দীর্ঘমেয়দি, অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, পূর্ণাঙ্গ ও উৎপাদনশীল ও উপযুক্ত কাজের সুবিধা নিশ্চিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# ক্ষুদ্র ব্যবসাগুলো বিকাশে তাদের জন্য ঋণসুবিধা ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করা।
# কোম্পানিগুলো যাতে টেকসই উন্নয়ন করে এবং পরিবেশের ক্ষতি না করে তা নিশ্চিত করা।
# সংশ্লিষ্ট দেশের সুনির্দিষ্ট চাহিদা পূরণ ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে গবেষণার জন্য সম্পদ বরাদ্দ করা।
# ২০২০ সালের মধ্যে সবার, বিশেষ করে যারা স্বল্পোন্নত দেশে বসবাস করেন, যাতে ইন্টারনেট সুবিধা থাকে ও তারা যাতে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারে তা নিশ্চিত করা।

লক্ষ্যমাত্রা ১০: বৈষম্য কমানো
(দেশের অভ্যন্তরে ও দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য হ্রাস করা)
টার্গেটসমূহ:
# দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল ভোগের জন্য দরিদ্রদের সহায়তা প্রদান করা।
# আইন বা বিধিবিধানসমূহ যাতে কোনো গোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক না হয় তা নিশ্চিত করা, বরং জনগণের প্রয়োজনের কথা শোনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মতামত নেওয়া উচিত।
# আইন ও সামাজিক কর্মসূচিগুলো যাতে সুবিধাবঞ্চিত ও অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেয় তা নিশ্চিত করা। উদাহরণস্বরূপ, কোনো রাজনৈতিক দলে কোটা পদ্ধতি প্রচলনের সময়, যুবক, নারী, আদিবাসী, এবং প্রতিবন্ধীদের অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
# কোনো ব্যক্তি এক দেশ থেকে অন্য দেশে বসবাসের জন্য গেলে যাতে আইনি সুরক্ষা পায় তা নিশ্চিত করা।

লক্ষ্যমাত্রা ১১: টেকসই নগর ও কমিউনিটি
(নগর ও মানব বসতির স্থানগুলো সবার জন্য, নিরাপদ, দীর্ঘস্থায়ী ও টেকসই করা)
টার্গেটসমূহ:
# সবার জন্য মানসম্মত, নিরাপদ বাসস্থান ও মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা।
# নিরাপদ, সুবিন্যস্ত পরিবহণ সুবিধা প্রদান করা, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয় এবং যা বিশেষ করে শিশু, নারী ও অরক্ষিত মানুষের কথা ভেবে তৈরি করা হয়েছে।
# নগর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও আলোচনায় কমিউনিটিগুলোকে সম্পৃক্ত করা।
# পরিবেশ ও সংস্কৃতির গুরুত্ব অনুধাবন ও তার সুরক্ষা জোরদার করা।
# দুর্যোগ মোকাবেলার সামর্থ্য বাড়ানো।
# বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও বায়ুর মান নিয়মিত পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করা।
# কমিউনিটিগুলোকে এমনভাবে প্রস্তুত করা যাতে করে তারা নিজেদের সম্পদ যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারে এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করতে পারে।

লক্ষ্যমাত্রা ১২: দায়িত্বপূর্ণ ভোগ এবং উৎপাদন
(টেকসই ভোগ ও উৎপাদনের ধরন নিশ্চিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# বর্তমানে সারা বিশ্বে ব্যক্তি ও কোম্পানি-কর্তৃক জনপ্রতি খাবারের যে অপচয় তা অর্ধেকে নামিয়ে আনা।
# ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যগুলো নিয়ন্ত্রণে ২০২০ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক চুক্তি সম্পাদন নিশ্চিত করা এবং বায়ু, পানি ও মাটির যতœ নেয়া।
# তিনটি “জ” এর সাহায্যে বর্জ্য উৎপাদন হ্রাস করা: হ্রাস (জবফঁপব), পুনর্ব্যবহার (জবঁংব), এবং পুনর্ব্যবহারোপযোগী করা (জবপুপষব)।
# বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম যাতে দায়িত্বপূর্ণ, উন্মুক্ত ও পরিবেশবান্ধব হয় তা নিশ্চিত করা।
ক্স জনগণকে অবহিত রাখা, সচেতন করা, এবং প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে জীবনযাপনের উপায় বাতলে দেয়া।

লক্ষ্যমাত্রা ১৩: জলবায়ু বিষয়ক পদক্ষেপ
(জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা)
টার্গেটসমূহ:
# লোকজন যাতে জলবায়ু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ-উদ্ভূত বিপদ মোকাবিলায় ভালোভাবে প্রস্তুত থাকে তা নিশ্চিত করা।
# স্ব-স্ব সরকারের এজেন্ডায় জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সম্পদের জোগান দেয়া।

লক্ষ্যমাত্রা ১৫: ভূ-পৃষ্ঠের জীবন
(পৃথিবীর ইকোসিস্টেম (বাস্তুসংস্থান) সুরক্ষা, পুনর্বহাল করা এবং এর টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করা, টেকসইভাবে বন ব্যবস্থাপনা করা, মরুকরণ রোধ, ভূমিক্ষয় বন্ধ করা এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিসাধন বন্ধ করা)
টার্গেটসমূহ:
# স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক চুক্তির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ইকোসিস্টেম (উদাহরণস্বরূপ, মরুভূমি ও রেইনফরেস্ট) সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করা।
# বন উজাড় হওয়া কমানো এবং ২০২০ সালের মধ্যে পুনঃবনায়নের লক্ষ্যে আরও গাছ লাগানো।
# বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর সুরক্ষা এবং জরুরি ভিত্তিতে সেগুলোর বিলুপ্তি রোধ; প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের সুরক্ষিত প্রজাতিগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিকার ও পাচার বন্ধ করা। আদিবাসী কমিউনিটিগুলোকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা
জরুরি।

লক্ষ্যমাত্রা ১৬: শান্তি, ন্যায়বিচার ও ন্যায়বিচার
(টেকসই উন্নয়নের জন্য শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, সবার ন্যায়বিচারের সুযোগ নিশ্চিত করা এবং সর্বস্তরে কার্যকর, জবাবদিহিমূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা)
টার্গেটসমূহ:
# বিশ্বে সহিংসতা ও সহিংসতা-উদ্ভূত মৃত্যু বন্ধ করা।
# শিশুদের ওপর অত্যাচার, প্রতারণা, পাচার এবং সব ধরনের সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করা।
# প্রত্যেক ব্যক্তি যেন নিজ দেশে বা প্রবাসে বিচারের সমান সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা।
# সকল ধরনের অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা।
# রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বাড়ানো যা নাগরিকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করবে।
# সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নাগরিকদের পরামর্শ গ্রহণ নিশ্চিত করা এবং সরকার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের কথা বিবেচনা করে সিদ্ধান্তগ্রহণ করবে।
# প্রত্যেক শিশুকে জন্মনিবন্ধনসহ বৈধ পরিচয় প্রদান নিশ্চিত করা।
# তথ্যে সবার অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা।
# সহিংসতা, সন্ত্রাস ও অপরাধ রোধে প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা।

লক্ষ্যমাত্রা ১৭: লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অংশীদারিত্ব
(বাস্তবায়ন উপায়গুলো আরও কার্যকর করা এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব পুনর্জাগরিত করা)
টার্গেটসমূহ:
# ২০৩০ সালের মধ্যে সকল রাষ্ট্র যাতে এসব লক্ষ্য পূরণ করে তা নিশ্চিত করা। বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রাগুলো জাতীয় পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে এবং প্রতিটি রাষ্ট্র তাদের নিজেদের জন্য কোন বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।
# এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিটি রাষ্ট্র যাতে তার নিজস্ব সম্পদের সংস্থান করে তা নিশ্চিত করা। এছাড়া স্বল্পোন্নত দেশগুলোর এসব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে উন্নত দেশগুলোর সহায়তার অঙ্গীকার করা উচিত।
# স্ব-স্ব দেশের নীতি-সিদ্ধান্তগুলোকে সম্মান করা, তবে শর্ত হচ্ছে সেগুলোকে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
# বৈশ্বিক লক্ষ্যমাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যেসব ব্যক্তি ও সংস্থা অনেকদিন ধরে কাজ করছে তাদেরকে সম্পৃক্ত করা। লক্ষ্যমাত্রাগুলো পূরণের কর্মযজ্ঞে এসব ব্যক্তি ও সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা উচিত, কারণ তাদের অভিজ্ঞতা ও সহায়তা এ কাজে আবশ্যক।
# রাষ্ট্রগুলো বৈশ্বিক লক্ষমাত্রাগুলো পূরণের পথে যাতে নিজেদের অগ্রগতি নিরূপণ করতে পারে সেজন্য ২০২০ সালের মধ্যে তাদের উপাত্ত ও পরিসংখ্যান ব্যবস্থাপনার মান বাড়ানো নিশ্চিত করা।

এসডিজির বৈশিষ্ট্য:
১. এমডিজি থেকে পৃথক: এসডিজি এমডিজির অভিজ্ঞতার আলোকে প্রণীত হলেও এর পরিধি এমডিজি থেকে অনেক বিস্তৃত এবং এমডিজির সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করা এর লক্ষ্য। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টিসহ উন্নয়নের গতানুগতিক কর্মসূচির বাইরে এতে আরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন লক্ষ্য। লক্ষ্য ও টার্গেটগুলোর গভীর আন্তঃসংযোগ ও পারস্পরিক যোগসূত্র নতুন এজেন্ডায় সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত।
এমডিজি প্রণীত হয়েছিল ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্য নিয়ে, আর এসডিজি’র লক্ষ্য হলো টেকসইভাবে এগুলোর অবসান। যেখানে এমডিজির উদ্দেশ্য ছিল ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য অবসানে আমাদের ‘অর্ধেক’ পথে নিয়ে যাওয়ার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও আনুপাতিক লক্ষ্য অর্জন, সেখানে এসডিজি’র লক্ষ্য হলো ২০৩০ সালের মধ্যে আমাদের সফলতার শেষ প্রান্তে নিয়ে যাওয়া — এগুলো শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। এসডিজি’র উদ্দেশ্য হলো সবচেয়ে পেছনে পড়াদের অগ্রাধিকার দেয়া।
২. সার্বজনীনতা: এসডিজি হলো সর্বজনীন, উন্নত-অনুন্নত সব দেশে, সব মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এর লক্ষ্য হলো জেন্ডার, বয়স, বিকলাঙ্গতা, আয়, স্থান, জাতিসত্তা ও অন্যান্য অবস্থা-নির্বিশেষে কেউ যেন বাদ না যায়। এর লক্ষ্য হলো সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ইস্যু সমন্বয়ে সুসংহত উন্নয়ন উৎসাহিত করা। অন্যান্য উন্নয়ন-সম্পর্কিত ইস্যুর সঙ্গে গণতন্ত্র, দায়বদ্ধতা, সম্প্রীতি, ন্যায়পরায়ণতা, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয়ে অগ্রাধিকার আনা।
৩. সর্বব্যাপী: এমডিজিতে আটটি লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এসডিজি’র জন্য উচ্চপর্যায়ের কমিটি প্রথমে ১২টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু দারিদ্র্যের মূলোৎপাটন, মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং সুশাসনকে বিবেচনায় এনে ‘ওপেন ওয়ার্কিং গ্র“প’ মোট ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা তুলে ধরে। এটিই চূড়ান্ত। টেকসই উন্নয়নের জটিল বিষয়গুলো এমডিজিতে স্থান না পেলেও এসডিজিতে গুরুত্ব পেয়েছে।
৪. ক্ষুধামুক্তির শর্তাবলী: ‘ক্ষুধামুক্তির তিনটি স্তম্ভকে’ (নারীর ক্ষমতায়ন, সকলকে সম্পৃক্তকরণ এবং স্থানীয় সরকারের সাথে অংশীদারিত্ব) এমডিজিতে তেমন গুরুত্ব দেয়া যায়নি। জেন্ডার, ক্ষমতায়ন, এবং সকল পর্যায়ে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ইত্যাদি জটিল বিষয়গুলোকে এসডিজিতে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
৫. অংশগ্রহণমূলক পরিকল্পনা: এমডিজি নির্ধারিত হয়েছিল টপ-ডাউন প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ উচ্চপর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বনেতাদের অংশগ্রহণে। কিন্তু এসডিজি নির্ধারণে সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে, যা বিশ্বে এর আগে কখনও হয়নি। প্রায় ১০০টি দেশের সাথে মুখোমুখি সভা হয়েছে এবং কোটি মানুষের মতামত সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন জরিপের মাধ্যমে। অর্থাৎ এসডিজি ব্যাপক কনসালটেশন বা আলোচনার ভিত্তিতে গৃহীত হয়। এটি জাতিসংঘের ইতিহাসের সর্বাধিক অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগ, যাতে বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নাগরিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহ অংশ নিয়েছে। তাই এটি বাইরে থেকে আরোপিত নয়, বরং জনগণের মালিকানায় প্রণীত এজেন্ডা।
৬. দরিদ্রতা থেকে ক্ষুধাকে আলাদাকরণ: এমডিজিতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে একসাথে (এমডিজি-১) রাখা হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল একটি সমাধান হলেই আরেকটির সুরাহা হয়ে যাবে। কিন্তু এসডিজিতে খাদ্য এবং পুষ্টি নিরাপত্তাকে ‘দরিদ্রতা’ থেকে আলাদাভাবে দেখা হয়েছে।
৭. অর্থায়ন: এমডিজিতে মনে করা হয়েছিল যে, ধনী দেশগুলো থেকে সহায়তা নিয়ে দরিদ্রতা দূর করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে সেটি সফলতা পায়নি। এসডিজিতে টেকসই এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নকে প্রধান কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। তাতে সংশ্লিষ্ট দেশের রাজস্ব বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
৮. শান্তি প্রতিষ্ঠা: বিগত সময়ে দেখা গেছে যে, শান্তিপূর্ণ এবং সুশাসনভুক্ত দেশগুলো অগ্রগতি লাভ করেছে। এখন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধুমাত্র বিরোধপূর্ণ দেশগুলোতেই ‘তীব্র দরিদ্রতা’ থেকে যাবে। ক্ষুধা ও দরিদ্রতাকে দূর করার জন্য তাই শান্তি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। কিন্তু এটি এমডিজিতে গুরুত্ব পায়নি, এসডিজিতে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
৯. মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা: পর্যবেক্ষণ, মূল্যায়ন ও জবাবদিহিতা সম্পর্কে এমডিজিতে কিছুই বলা নেই। এসডিজিতে ২০২০ সালের মধ্যে তথ্য বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাতে জাতীয় পর্যায়ে মানুষের আয়, বয়স, জেন্ডার, নৃতাত্বিক তথ্য, অভিবাসন পরিস্থিতি, ভৌগোলিক অবস্থান এবং অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে মানসম্মত, সময়নিষ্ঠ ও নির্ভরযোগ্য বিবরণ তৈরি করা হবে।
১০. মানসম্মত শিক্ষা: এমডিজিতে সংখ্যার ওপর, যেমন শিক্ষাক্ষেত্রে ভর্তির হারের ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে, যার ফলে অনেক দেশে শিক্ষার মানে চরম অবনতি ঘটেছে। পক্ষান্তরে, এসডিজিতে প্রথমবারের মতো শিক্ষার মান, তথা জ্ঞানার্জন ও অব্যাহত শিক্ষার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ ও মানবিক বিশ্ব তৈরির কথা বলা হয়েছে।

এসডিজি’র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে যা করণীয়
এসডিজিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দ স্বাক্ষর করলেও শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক উদ্যোগ বা সদস্য রাষ্ট্রসমূহের সরকারের নির্দেশে এসডিজি বাস্তবায়ন হবে না। এর বাস্তবায়নে প্রয়োজন হবে প্রধানত স্থানীয় উদ্যোগ, যদিও এ ক্ষেত্রে বৈশ্বিক সহযোগিতা, বিশেষত জাতীয় অঙ্গীকারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিশেষ করে এর স্থানীয়করণ করে তথা স্থানীয় জনসাধারণকে উজ্জীবিত, অনুপ্রাণিত ও সম্পৃক্ত করে ‘কমিউনিটি-লেড ডেভেলপমেন্ট’ এপ্রোচের মাধ্যমে এসডিজি অর্জন করতে হবে।

মূলত, “এসডিজি ইউনিয়ন” অর্জনের জন্য প্রয়োজন হবে জনগণ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির একটি কার্যকর অংশীদারিত্ব। জনপ্রশাসনের সহযোগিতা অবশ্য এ কাজকে আরও বেগবান করবে। এ অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক সৃষ্টিতে তৃণমূলে গড়ে উঠা “সিভিল সোসাইটি” একটি সংগঠিত সামাজিক শক্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে আমাদের যুব ও তরুণ প্রজন্ম। তাই স্থানীয় উন্নয়নে স্বেচ্ছাব্রতী মানসিকতা সৃষ্টি করে তাদের সম্পৃক্ত করার কোনো বিকল্প নেই। এদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশকে গঠনমূলক কাজে নিয়মিত অংশগ্রহণের জন্য উজ্জীবিত করা গেলে সারাদেশে একটি বিরাট কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হতে পারে। আর এ ধরনের কর্মযজ্ঞ বাংলাদেশের জন্য একটি অমিত সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে পারে। আমরা দেখতে পাই যে, এসডিজি’র ৪, ৫ এবং ৮নং লক্ষ্যে স্পষ্টভাবে যুব ও তরুণদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেমন, এসডিজি (৪): সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানসম্মত এবং জীবনব্যাপী শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করা; এসডিজি (৮): সবার জন্য স্থায়ী, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক কার্যক্রম উৎসাহিত, পরিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান এবং উপযুক্ত কর্মের নিশ্চয়তা প্রদান করা।

এসডিজি’র লক্ষ্য ৫ এ নারীদের সম-অধিকার এবং তাদের ও কন্যাশিশুদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। তাই তরুণদের জন্য সুযোগ তৈরির পাশাপাশি এসডিজি অর্জনে সমাজের সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ও সম-অধিকার এবং নেতৃত্ব প্রয়োজন। অর্থাৎ পদ্ধতিগতভাবে নারীর ক্ষমতায়ন বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশ এসডিজি অর্জনে সফল হবে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল-এর এক গবেষণা (২০১৫) অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০৩১ সাল নাগাদ ১৯ কোটিতে পৌঁছাবে। তখন দেশের নারীর সংখ্যা হবে প্রায় দশ কোটি। তারা তখন দেশের মানব মূলধন ভিত্তির অর্ধেকের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং সার্বিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে — যার জন্য এসডিজি’র লক্ষ্য ৫ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।

তবে মোটাদাগে বলতে গেলে জাতীয় পরিকল্পনা ও নীতিমালার মাধ্যমে এসডিজি’র লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হবে। এটি বাস্তবায়নে নেতৃত্ব প্রয়োজন হবে। অর্থায়ন ও বাস্তবায়নের উপায়গুলোর ধারাবাহিক পদ্ধতিতে যেতে হবে। সব ধরনের তথ্য প্রাপ্তিতে জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থাগুলোর সক্ষমতা থাকতে হবে। সব বিষয়গুলো প্রাতিষ্ঠানিক রূপে নিয়ে আসতে হবে। এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে দেশীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ সক্ষমতা। এছাড়া শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। আরও প্রয়োজন হবে নাগরিকদের পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে সক্রিয়করণ; তৃণমূল সংগঠনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণের কণ্ঠকে উচ্চকিত করার সুযোগ প্রদান; গতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি সৃষ্টি এবং অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারী একটি কার্যকর ও দায়বদ্ধ স্থানীয় সরকারব্যবস্থা।

শেষকথা:
একটি সুখী, সমৃদ্ধ, শোষণ-বঞ্চনাহীন গড়ে তোলা ছিল আমাদের মহান মুক্তি সংগ্রামের অন্যতম চেতনা। সেই চেতনারই পরিপূরক টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), যাতে প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, বিশ্বের সবচে’ দরিদ্রদের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, পৃথিবীকে সুরক্ষা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা করার। তাই এসডিজি বাস্তবায়ন করা গেলে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে, বাস্তবায়ন হবে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের চেতনা। আসুন, এসডিজি বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি সমন্বিত কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা সবাই ভূমিকা পালন করি।


প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০১৭

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *